পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৌতুকহাস্যের মাত্রা

কৌতুকজনক উত্তেজনা জন্মায় না। অতএব, এক্ষণে দেখা আবশ্যক, কৌতুকপীড়নের বিশেষ উপকরণটা কী।

 জড়প্রকৃতির মধ্যে করুণরসও নাই, হাস্যরস ও নাই। একটা বড়ো পাথর ছোটো পাথরকে গুঁড়াইয়া ফেলিলেও আমাদের চোখে জল আসে না, এবং সমতল ক্ষেত্রের মধ্যে চলিতে চলিতে হঠাৎ একটা খাপছাড়া গিরিশৃঙ্গ দেখিতে পাইলে তাহাতে আমাদের হাসি পায় না। নদীনির্ঝর পর্বত-সমুদ্রের মধ্যে মাঝে মাঝে আকস্মিক অসামঞ্জস্য দেখিতে পাওয়া যায়—তাহা বাধাজনক, বিরক্তিজনক, পীড়াজনক হইতে পারে, কিন্তু কোনো স্থানেই কৌতুকজনক হয় না। সচেতন পদার্থ-সম্বন্ধীয় খাপছাড়া ব্যাপার ব্যতীত শুদ্ধ জড়পদার্থে আমাদের হাসি আনিতে পারে না।

 কেন, তাহা ঠিক করিয়া বলা শক্ত কিন্তু আলোচনা করিয়া দেখিতে দোষ নাই।

 আমাদের ভাষায় কৌতুক এবং কৌতুহল শব্দের অর্থের যোগ আছে। সংস্কৃতসাহিত্যে অনেক স্থলে একই অর্থে বিকল্পে উভয় শব্দেরই প্রয়োগ হইয়া থাকে। ইহা হইতে অনুমান করি, কৌতুহলবৃত্তির সহিত কৌতুকের বিশেষ সম্বন্ধ আছে।

 কৌতুহলের একটা প্রধান অঙ্গ নূতনত্বের লালসা, কৌতুকেরও একটা প্রধান উপাদান নূতনত্ব। অসংগতের মধ্যে যেমন নিছক বিশুদ্ধ নূতনত্ব আছে, সংগতের মধ্যে তেমন নাই।

 কিন্তু প্রকৃত অসংগতি ইচ্ছাশক্তির সহিত জড়িত, তাহা জড়পদার্থের মধ্যে নাই। আমি যদি পরিষ্কার পথে চলিতে চলিতে হঠাৎ দুর্গন্ধ পাই তবে আমি নিশ্চয় জানি, নিকটে কোথাও এক জায়গায় দুর্গন্ধ বস্তু আছে তাই এইরূপ ঘটিল; ইহাতে কোনোরূপ নিয়মের ব্যতিক্রম নাই,

১২৩