বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



সৌন্দর্য সম্বন্ধে সন্তোষ


 দীপ্তি এবং স্রোতস্বিনী উপস্থিত ছিলেন না, কেবল আমরা চারি জন ছিলাম।

 সমীর বলিল, ‘দেখো, সেদিনকার সেই কৌতুকহাস্যের প্রসঙ্গে আমার একটা কথা মনে উদয় হইয়াছে। অধিকাংশ কৌতুক আমাদের মনে একটা কিছু অদ্ভুত ছবি আনয়ন করে এবং তাহাতেই আমাদের হাসি পায়। কিন্তু যাহারা স্বভাবতঃই ছবি দেখিতে পায় না, যাহাদের বুদ্ধি অ্যাব্‌স্ট্রাক্ট্‌ বিষয়ের মধ্যে ভ্রমণ করিয়া থাকে, কৌতুক তাহাদিগকে সহসা বিচলিত করিতে পারে না।’

 ক্ষিতি কহিল, ‘প্রথমতঃ তোমার কথাটা স্পষ্ট বুঝা গেল না, দ্বিতীয়তঃ অ্যাব্‌স্ট্রাক্ট্‌ শব্দটা ইংরাজি।’

 সমীর কহিল, ‘প্রথম অপরাধটা খণ্ডন করিবার চেষ্টা করিতেছি। কিন্তু দ্বিতীয় অপরাধ হইতে নিস্কৃতির উপায় দেখি না, অতএব সুধীগণকে ওটা নিজ গুণে মার্জনা করিতে হইবে। আমি বলিতেছিলাম, যাহারা দ্রব্যটাকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়া তাহার গুণটাকে অনায়াসে গ্রহণ করিতে পারে তাহারা স্বভাবতঃ হাস্যরসরসিক হয় না।’

 ক্ষিতি মাথা নাড়িয়া কহিল, ‘উঁহু, এখনো পরিষ্কার হইল না।’

 সমীর কহিল, ‘একটা উদাহরণ দিই। প্রথমতঃ দেখো, আমাদের সাহিত্যে কোনো সুন্দরীর বর্ণনা-কালে ব্যক্তিবিশেষের ছবি আঁকিবার দিকে লক্ষ্য নাই; সুমেরু দাড়িম্ব কদম্ব বিম্ব প্রভৃতি হইতে কতকগুলি গুণ বিচ্ছিন্ন করিয়া লইয়া তাহারই তালিকা দেওয়া হয় এবং সুন্দরীমাত্রেরই প্রতি তাহার আরোপ হইয়া থাকে। আমরা ছবির মতো স্পষ্ট করিয়া কিছু দেখি না এবং ছবি আঁকি না, সেই জন্য কৌতুকের একটি প্রধান অঙ্গ হইতে আমরা বঞ্চিত। আমাদের প্রাচীন কাব্যে প্রশংসাচ্ছলে

১২৭