পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভদ্রতার আদর্শ

সকল প্রকার স্বভাববৈচিত্র্য ভুলিয়া সেই সমাজাতীত আধ্যাত্মিক শিখরে অবহেলে চড়িয়া বসিয়া আছি। আমরা ঢিলা কাপড় এবং অত্যন্ত ঢিলা আদবকায়দা লইয়া দিব্য আরামে ছুটি ভোগ করিতেছি। আমরা যেমন করিয়াই থাকি আর যেমন করিয়াই চলি তাহাতে কাহারও সমালোচনা করিবার কোনো অধিকার নাই, কারণ আমরা উত্তম মধ্যম অধম সকলেই খাটো ধুতি ও ময়লা চাদর পরিয়া নির্‌গুণ ব্রহ্মে লয় পাইবার জন্য প্রস্তুত হইয়া বসিয়া আছি।’

 হেনকালে ব্যোম তাহার বৃহৎ লগুড়খানি হাতে করিয়া আসিয়া উপস্থিত। তাহার বেশ অন্য দিনের অপেক্ষাও অদ্ভূত। তাহার কারণ, আজ ক্রিয়াকর্মের বাড়ি বলিয়াই তাহার প্রাত্যহিক বেশের উপরে বিশেষ করিয়া একখানা অনির্দিষ্ট-আকৃতি চাপকান-গোছের পদার্থ চাপাইয়া আসিয়াছে, তাহার আশপাশ হইতে ভিতরকার অসংগত কাপড়গুলার প্রান্ত স্পষ্ট দেখা যাইতেছে— দেখিয়া আমাদের হাস্য সম্বরণ করা দুঃসাধ্য হইয়া উঠিল, এবং দীপ্তি ও স্রোতস্বিনীর মনে যথেষ্ট অবজ্ঞার উদয় হইল।

 ব্যোম জিজ্ঞাসা করিল, ‘তোমাদের কী বিষয়ে আলাপ হইতেছে।’

 সমীর আমাদের আলোচনার কিয়দংশ সংক্ষেপে বলিয়া কহিল, ‘আমরা দেশসুদ্ধ সকলেই বৈরাগ্যের ‘ভেক’ ধারণ করিয়াছি।’

 ব্যোম কহিল, ‘বৈরাগ্য ব্যতীত কোনো বৃহৎ কর্ম হইতেই পারে না। আলোকের সহিত যেমন ছায়া, কর্মের সহিত তেমনি বৈরাগ্য নিয়ত সংযুক্ত হইয়া আছে। যাহার যে পরিমাণে বৈরাগ্যে অধিকার পৃথিবীতে সে সেই পরিমাণে কাজ করিতে পারে।’

 ক্ষিতি কহিল, ‘সেই জন্য পৃথিবীসুদ্ধ লোক যখন সুখের প্রত্যাশায় সহস্র চেষ্টায় নিযুক্ত ছিল তখন বৈরাগী ডারুয়িন সংসারের সহস্র চেষ্টা

১৩৮