পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পরিচয়

 ক্ষিতি হাসিয়া কহিল, ‘ডায়ারিকে কেন ষে দ্বিতীয় জীবন বলিতেছ আমি তো এ পর্যন্ত বুঝিতে পারিলাম না।’

 আমি কহিলাম, ‘আমার কথা এই, জীবন এক দিকে একটা পথ আঁকিয়া চলিতেছে, তুমি যদি ঠিক তার পাশে কলম হস্তে তাহার অনুরূপ আর একটা রেখা কাটিয়া যাও, তবে ক্রমে এমন অবস্থা আসিবার সম্ভাবনা, যখন বোঝা শক্ত হইয়া দাঁড়ায়, তোমার কলম তোমার জীবনের সমপাতে লাইন কাটিয়া যায় না তোমার জীবন তোমার কলমের লাইন ধরিয়া চলে। দুটি রেখার মধ্যে কে আসল, কে নকল, ক্রমে স্থির করা কঠিন হয়। জীবনের গতি স্বভাবতঃই রহস্যময়, তাহার মধ্যে অনেক আত্মখন্ডন, অনেক স্বতোবিরোধ, অনেক পূর্বাপরের অসামঞ্জস্য থাকে। কিন্তু লেখনী স্বভাবতঃই একটা সুনির্দিষ্ট পথ অবলম্বন করিতে চাহে। সে সমস্ত বিরোধের মীমাংসা করিয়া, সমস্ত অসামঞ্জস্য সমান করিয়া, কেবল একটা মোটামুটি রেখা টানিতে পারে। সে একটা ঘটনা দেখিলে তাহার যুক্তিসংগত সিদ্ধান্তে উপস্থিত না হইয়া থাকিতে পারে না। কাজেই তাহার রেখাটা সহজেই তাহার নিজের গড়া সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হইতে থাকে, এবং জীবনকেও তাহার সহিত মিলাইয়া আপনার অনুবর্তী করিতে চাহে।”

 কথাটা ভালো করিয়া বুঝাইবার জন্য আমার ব্যাকুলতা দেখিয়া স্রোতস্বিনী দয়ার্দ্রচিত্তে কছিল, ‘বুঝিয়াছি তুমি কী বলিতে চাও। স্বভাবতঃ আমাদের মহাপ্রাণী তাঁহার অতিগোপন নির্মাণশালায় বসিয়া এক অপূর্ব নিয়মে আমাদের জীবন গড়েন, কিন্তু ডায়ারি লিখিতে গেলে দুই ব্যক্তির উপর জীবন গড়িবার ভার দেওয়া হয়। কতকটা জীবন অনুসারে ভায়ারি হয়, কতকটা ডায়ারি অনুসারে জীবন হয়।”

 স্রোতস্বিনী এমনি সহিষ্ণু ভাবে নীরবে সমনোযোগে সকল কথা শুনিয়া