পরিচয়
সমীর বিচলিত হইয়া কহিল, ‘অমন কথা বলিতে আছে! পৃথিবীতে অপরাধ স্বীকার করা মহাভ্রম। আমরা মনে করি, দোষ স্বীকার করিলে বিচারক দোষ কম করিয়া দেখে, তাহা নহে। অন্য লোককে বিচার করিবার এবং ভৎর্সনা করিবার সুখ একটা দুর্লভ সুখ; তুমি নিজের দোষ নিজে যতই বাড়াইয়া বল না কেন, কঠিন বিচারক সেটাকে ততই চাপিয়া ধরিয়া সুখ পায়। আমি কোন্ পথ অবলম্বন করিব ভাবিতেছিলাম, এখন স্থির করিতেছি আমি ডায়ারি লিখিব।'
আমি কহিলাম, ‘আমিও প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমার নিজের কথা লিখিব না। এমন কথা লিখিব যাহা আমাদের সকলের। এই আমরা যে-সব কথা প্রতিদিন আলোচনা করি—’
স্রোতস্বিনী কিঞ্চিৎ ভীত হইয়া উঠিল। সমীর করজোড়ে কহিল, ‘দোহাই তোমার, সব কথা যদি লেখায় ওঠে তবে বাড়ি হইতে কথা মুখস্থ করিয়া আসিয়া বলিব এবং বলিতে বলিতে যদি হঠাৎ মাঝখানে ভুলিয়া যাই তবে আবার বাড়ি গিয়া দেখিয়া আসিতে হইবে। তাহাতে ফল হইবে এই যে, কথা বিস্তর কমিবে এবং পরিশ্রম বিস্তর বাড়িবে। যদি খুব ঠিক সত্য কথা লেখ, তবে তোমার সঙ্গ হইতে নাম কাটাইয়া আমি চলিলাম।'
আমি কহিলাম, ‘আরে না, সত্যের অনুরোধ পালন করিব না, বন্ধুর অনুরোধই রাখিব। তোমরা কিছু ভাবিয়ো না, আমি তোমাদের মুখে কথা বানাইয়া দিব।”
ক্ষিতি বিশাল চক্ষু প্রসারিত করিয়া কহিল, ‘সে যে আরো ভয়ানক। আমি বেশ দেখিতেছি, তোমার হাতে লেখনী পড়িলে যত সব কুযুক্তি আমার মুখে দিবে আর তাহার অকাট্য উত্তর নিজের মুখ দিয়া বাহির করিবে।’
১২