পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সৌন্দর্যের সম্বন্ধ

মোটা জিনিসকে একেবারে অস্বীকার করিতে চেষ্টা করিতেছে। ধূলিকে আবৃত করে, স্বার্থকে লজ্জা দেয়, ক্ষুধাকে অন্তরালে নির্বাসিত করিয়া রাখে। মলিনতা পৃথিবীতে বহু কালের আদিম সৃষ্টি, ধূলিজঞ্জালের অপেক্ষা প্রাচীন পদার্থ মেলাই কঠিন—তাই বলিয়া সেইটেই সব চেয়ে সত্য হইল? আর অন্তর-অস্তঃপুরের যে লক্ষ্মীরূপিণী গৃহিণী আসিয়া তাহাকে ক্রমাগত ধৌত করিতে চেষ্টা করিতেছে তাহাকেই কি মিথ্যা বলিয়া উড়াইয়া দিতে হইবে।'

 ক্ষিতি কহিল, ‘তোমরা ভাই এত ভয় পাইতেছ কেন। আমি তোমাদের সেই অন্তঃপুরের ভিত্তিতলে ডাইনামাইট লাগাইতে আসি নাই। কিন্তু একটু ঠাণ্ডা হইয়া বলো দেখি, পুণ্যাহের দিন ঐ বেসুরো সানাইটা বাজাইয়া পৃথিবীর কী সংশোধন করা হয়। সংগীতকলা তো নহেই।'

 সমীর কহিল, ‘ও আর কিছুই নহে, একটা স্বর ধরাইয়া দেওয়া। সংবৎসরের বিবিধ পদস্খলন এবং ছন্দঃপতনের পর পুনর্বার সমের কাছে আসিয়া এক বার ধুয়ায় আনিয়া ফেলা। সংসারের স্বার্থকোলাহলের মধ্যে মাঝে মাঝে একটা পঞ্চম সুর সংযোগ করিয়া দিলে, নিদেন ক্ষণকালের জন্য পৃথিবীর শ্রী ফিরিয়া যায়; হঠাৎ হাটের মধ্যে গৃহের শোভা আসিয়া আবির্ভূত হয়; কেনাবেচার উপর ভালোবাসার স্নিগ্ধ দৃষ্টি চন্দ্রালোকের ন্যায় নিপতিত হইয়া তাহার শুষ্ক কঠোরতা দূর করিয়া দেয়। যাহা হইয়া থাকে পৃথিবীতে তাহা চীৎকারস্বরে হইতেছে, আর যাহা হওয়া উচিত তাহা মাঝে মাঝে এক-এক দিন আসিয়া মাঝখানে বসিয়া সুকোমল সুন্দর সুরে সুর দিতেছে এবং তখনকার মতো সমস্ত চীৎকারস্বর নরম হইয়া আসিয়া সেই সুরের সহিত আপনাকে মিলাইয়া লইতেছে— পুণ্যাহ সেই সংগীতের দিন।”

 আমি কহিলাম, উৎসবমাত্রই তাই। মানুষ প্রতিদিন যে ভাবে কাজ করে এক-এক দিন তাহার উল্টা ভাবে আপনাকে সারিয়া লইতে

১৬