পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

নরনারী

করিয়া তোলে। আমাদের দেশে পুরুষেরা গৃহপালিত, মাতৃলালিত, পত্নীচালিত। কোনো বৃহৎ ভাব, বৃহৎ কার্য, বৃহৎ ক্ষেত্রের মধ্যে তাহাদের জীবনের বিকাশ হয় নাই; অথচ অধীনতার পীড়ন, দাসত্বের হীনতা, দুর্বলতার লাঞ্ছনা তাহাদিগকে নতশিরে সহ্য করিতে হইয়াছে। তাহাদিগকে পুরুষের কোনো কর্তব্য করিতে হয় নাই এবং কাপুরুষের সমস্ত অপমান বহিতে হইয়াছে। সৌভাগ্যক্রমে স্ত্রীলোককে কখনো বাহিরে গিয়া কর্তব্য খুঁজিতে হয় না, তরুশাখায় ফলপুষ্পের মতো কর্তব্য তাহার হাতে আপনি আসিয়া উপস্থিত হয়। সে যখ্‌নি ভালোবাসিতে আরম্ভ করে তখনি তাহার কর্তব্য আরম্ভ হয়; তখনি তাহার চিন্তা বিবেচনা যুক্তি কার্য, তাহার সমস্ত চিত্তবৃত্তি, সজাগ হইয়া উঠে; তাহার সমস্ত চরিত্র উদ্ভিন্ন হইয়া উঠিতে থাকে। বাহিরের কোনো রাষ্ট্রবিপ্লব তাহার কার্যের ব্যাঘাত করে না, তাহার গৌরবের হ্রাস করে না, জাতীয় অধীনতার মধ্যেও তাহার তেজ রক্ষিত হয়।’

 স্রোতস্বিনীর দিকে ফিরিয়া কহিলাম, ‘আজ আমরা একটি নূতন শিক্ষা এবং বিদেশী ইতিহাস হইতে পুরুষকারের নূতন আদর্শ প্রাপ্ত হইয়া বাহিরের কর্মক্ষেত্রের দিকে ধাবিত হইতে চেষ্টা করিতেছি। কিন্তু ভিজা কাষ্ঠ জ্বলে না, মরিচা-ধরা চাকা চলে না; যত জলে তাহার চেয়ে ধোঁয়া বেশি হয়, যত চলে তাহার চেয়ে শব্দ বেশি করে। আমরা চিরদিন অকর্মণ্য ভাবে কেবল দলাদলি কানাকানি হাসাহাসি করিয়াছি, তোমরা চিরকাল তোমাদের কাজ করিয়া আসিয়াছ। এই জন্য শিক্ষা তোমরা যত সহজে যত শীঘ্র গ্রহণ করিতে পার, আপনার আয়ত্ত করিতে পার, তাহাকে আপনার জীবনের মধ্যে প্রবাহিত করিতে পার, আমরা তেমন পারি না।’

 স্রোতস্বিনী অনেক ক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন; তার পর ধীরে ধীরে

৩৭