পল্লিগ্রামে
আমি এখন বাংলাদেশের এক প্রান্তে যেখানে বাস করিতেছি এখানে কাছাকাছি কোথাও পুলিশের থানা, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছারি নাই। রেলোয়ে স্টেশন অনেকটা দূরে। যে পৃথিবী কেনাবেচা বাদানুবাদ মামলা-মকদ্দমা এবং আত্মগরিমার বিজ্ঞাপন প্রচার করে, কোনো একটা প্রস্তরকঠিন পাকা বড়ো রাস্তার দ্বারা তাহার সহিত এই লোকালয়গুলির যোগস্থাপন হয় নাই। কেবল একটি ছোটো নদী আছে। যেন সে কেবল এই কয়খানি গ্রামেরই ঘরের ছেলেমেয়েদের নদী। অন্য কোনো বৃহৎ নদী, সুদূর সমুদ্র, অপরিচিত গ্রামনগরের সহিত যে তাহার যাতায়াত আছে তাহা এখানকার গ্রামের লোকেরা যেন জানিতে পারে নাই, তাই তাহারা অত্যন্ত সুমিষ্ট একটা আদরের নাম দিয়া ইহাকে নিতান্ত আত্মীয় করিয়া লইয়াছে।
এখন ভাদ্রমাসে চতুর্দিক জলমগ্ন— কেবল ধান্যক্ষেত্রের মাথাগুলি অল্পই জাগিয়া আছে। বহু দূরে দূরে এক-একখানি তরুবেষ্টিত গ্রাম উচ্চভূমিতে দ্বীপের মতো দেখা যাইতেছে।
এখানকার মানুষগুলি এমনি অনুরক্ত ভক্তস্বভাব, এমনি সরল বিশ্বাসপরায়ণ যে, মনে হয় আডাম ও ইভ জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাইবার পূর্বেই ইহাদের বংশের আদিপুরুষকে জন্মদান করিয়াছিলেন। সেই জন্য শয়তান যদি ইহাদের ঘরে আসিয়া প্রবেশ করে তাহাকেও ইহারা শিশুর মতো বিশ্বাস করে এবং মান্য অতিথির মতো নিজের আহারের অংশ দিয়া সেবা করিয়া থাকে।
এই সমস্ত মানুষগুলির স্নিগ্ধ হৃদয়াশ্রমে যখন বাস করিতেছি এমন সময়ে আমাদের পঞ্চভূত-সভার কোনো একটি সভ্য আমাকে কতকগুলি খবরের কাগজের টুকরা। কাটিয়া পাঠাইয়া দিলেন। পৃথিবী যে ঘুরিতেছে,
৪২