পল্লিগ্রামে
স্থির হইয়া নাই, তাহাই স্মরণ করাইয়া দেওয়া তাহার উদ্দেশ্য। তিনি লণ্ডন হইতে, প্যারিস হইতে, গুটিকতক সংবাদের ঘূর্ণাবাতাস সংগ্রহ করিয়া ডাকযোগে এই জলনিমগ্ন শ্যামসুকোমল ধান্যক্ষেত্রের মধ্যে পাঠাইয়া দিয়াছেন।
একপ্রকার ভালোই করিয়াছেন। কাগজগুলি পড়িয়া আমার অনেক কথা মনে উদয় হইল, যাহা কলিকাতায় থাকিলে আমার ভালোরূপ হৃদয়ংগম হইত না।
আমি ভাবিতে লাগিলাম, এখানকার এই যে সমস্ত নিরক্ষর নির্বোধ চাষাভূষার দল— থিওরিতে আমি ইহাদিগকে অসভ্য বর্বর বলিয়া অবজ্ঞা করি, কিন্তু কাছে আসিয়া প্রকৃতপক্ষে আমি ইহাদিগকে আত্মীয়ের মতো ভালোবাসি। এবং ইহাও দেখিয়াছি আমার অন্তঃকরণ গোপনে ইহাদের প্রতি একটি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে।
কিন্তু লণ্ডন-প্যারিসের সহিত তুলনা করিলে ইহারা কোথায় গিয়া পড়ে! কোথায় সে শিল্প, কোথায় সে সাহিত্য, কোথায় সে রাজনীতি। দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া দূরে থাক্, দেশ কাহাকে বলে তাহাও ইহার জানে না।
এ সমস্ত কথা সম্পূর্ণরূপে পর্যালোচনা করিয়াও আমার মনের মধ্যে একটি দৈববাণী ধ্বনিত হইতে লাগিল— তবু এই নির্বোধ সরল মানুষগুলি কেবল ভালোবাসা নহে, শ্রদ্ধার যোগ্য।
কেন আমি ইহাদিগকে শ্রদ্ধা করি তাই ভাবিয়া দেখিতেছিলাম। দেখিলাম, ইহাদের মধ্যে যে একটি সরল বিশ্বাসের ভাব আছে তাহা অত্যন্ত বহুমূল্য। এমন কি, তাহাই মনুষ্যত্বের চিরসাধনার ধন। যদি মনের ভিতরকার কথা খুলিয়া বলিতে হয় তবে এ কথা স্বীকার করিব, আমার কাছে তাহা অপেক্ষা মনোহর আর কিছু নাই।
৪৩