পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পল্লিগ্রামে

প্রতারিত হইয়াছে; যে সকল উপায়ের উপর তাহার বড়ো বিশ্বাস ছিল সে সমস্ত একে একে ব্যর্থ হইতে দেখিয়াছে। ফরাসি বিপ্লবকে একটা বৃহৎ চেষ্টার বৃথা পরিণাম বলিয়া অনেকে মনে করে। এক সময় লোকে মনে করিয়াছিল, আপামর সাধারণকে ভোট দিতে দিলেই পৃথিবীর অধিকাংশ অমঙ্গল দূর হইবে— এখন সকলে ভোট দিতেছে, অথচ অধিকাংশ অমঙ্গল বিদায় লইবার জন্য কোনোরূপ ব্যস্ততা দেখাইতেছে না। কখনো বা লোকে আশা করিয়াছিল, স্টেটের দ্বারা মানুষের সকল দুর্দশা মোচন হইতে পারে; এখন আবার পণ্ডিতেরা আশঙ্কা করিতেছেন, স্টেটের দ্বারা দুর্দশা মোচনের চেষ্টা করিলে হিতে বিপরীত হইবারই সম্ভাবনা। কয়লার খনি, কাপড়ের কল এবং বিজ্ঞানশাস্ত্রের উপর কাহারও কাহারও কিছু কিছু বিশ্বাস হয়, কিন্তু তাহাতেও দ্বিধা ঘোচে না; অনেক বড়ো বড়ো লোক বলিতেছেন, কলের দ্বারা মানুষের পূর্ণতাসাধন হয় না। আধুনিক যুরোপ বলে, আশা করিয়ো না, বিশ্বাস করিয়ো না, কেবল পরীক্ষা করো।

 নবীন সভ্যতা যেন এক বৃদ্ধ পতিকে বিবাহ করিয়াছে; তাহার সমৃদ্ধি আছে কিন্তু যৌবন নাই, সে আপনার সহস্র পূর্ব-অভিজ্ঞতার দ্বারা জীর্ণ। উভয়ের মধ্যে ভালোরূপ প্রণয় হইতেছে না, গৃহের মধ্যে কেবল অশান্তি।

 এই সমস্ত আলোচনা করিয়া আমি এই পল্লীর ক্ষুদ্র সম্পূর্ণতার সৌন্দর্য দ্বিগুণ আনন্দে সম্ভোগ করিতেছি।

 তাই বলিয়া আমি এমন অন্ধ নহি যে, যুরোপীয় সভ্যতার মর্যাদা বুঝি না। প্রভেদের মধ্যে ঐক্যই ঐক্যের পূর্ণ আদর্শ, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই সৌন্দর্যের প্রধান কারণ। সম্প্রতি যুরোপে সেই প্রভেদের যুগ পড়িয়াছে; তাই বিচ্ছেদ, বৈষম্য। যখন ঐক্যের যুগ আসিবে তখন এই

৫০