বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



মনুষ্য


 স্রোতস্বিনী প্রাতঃকালে আমার বৃহৎ খাতাটি হাতে করিয়া আনিয়া কহিল, ‘এ সব তুমি কী লিখিয়াছ। আমি যে সকল কথা কস্মিন কালে বলি নাই, তুমি আমার মুখে কেন বসাইয়াছ।’

 আমি কহিলাম, ‘তাহাতে দোষ কী হইয়াছে।’

 স্রোতস্বিনী কহিল, ‘এমন করিয়া আমি কখনো কথা কহি না এবং কহিতে পারি না। যদি তুমি আমার মুখে এমন কথা দিতে যাহা আমি বলি বা না বলি আমার পক্ষে বলা সম্ভব, তাহা হইলে আমি এমন লজ্জিত হইতাম না। কিন্তু এ যেন তুমি একখানা বই লিখিয়া আমার নামে চালাইতেছ।’

 আমি কহিলাম, ‘তুমি আমাদের কাছে কতটা বলিয়াছ তাহা তুমি কী করিয়া বুঝিবে। তুমি যতটা বল তাহার সহিত, তোমাকে যতটা জানি, দুই মিশিয়া অনেকখানি হইয়া উঠে। তোমার সমস্ত জীবনের দ্বারা তোমার কথাগুলি ভরিয়া উঠে। তোমার সেই অব্যক্ত উহ্য কথাগুলি তো বাদ দিতে পারি না।’

 স্রোতস্বিনী চুপ করিয়া রহিল। জানি না, বুঝিল কি না-বুঝিল। বোধ হয় বুঝিল, কিন্তু তথাপি আবার কহিলাম, ‘তুমি জীবন্ত বর্তমান, প্রতি ক্ষণে নব নব ভাবে আপনাকে ব্যক্ত করিতেছ। তুমি যে আছ, তুমি যে সত্য, তুমি যে সুন্দর, এ বিশ্বাস উদ্রেক করিবার জন্য তোমাকে কোনো চেষ্টাই করিতে হইতেছে না। কিন্তু লেখায় সেই প্রথম সত্যটুকু প্রমাণ করিবার জন্য অনেক উপায় অবলম্বন এবং অনেক বাক্যব্যয় করিতে হয়। নতুবা প্রত্যক্ষের সহিত অপ্রত্যক্ষ সমকক্ষতা রক্ষা করিতে পারিবে কেন। তুমি যে মনে করিতেছ, আমি তোমাকে বেশি বলাইয়াছি তাহা ঠিক নহে। আমি বরং তোমাকে সংক্ষেপ করিয়া লইয়াছি; তোমার লক্ষ

৫২