মনুষ্য
লক্ষ কথা, লক্ষ লক্ষ কাজ, চিরবিচিত্র আকার-ইঙ্গিতের কেবলমাত্র সারসংগ্রহ করিয়া লইতে হইয়াছে। নহিলে তুমি যে কথাটি আমার কাছে বলিয়াছ, ঠিক সেই কথাটি আমি আর কাহারও কর্ণগোচর করাইতে পারিতাম না; লোকে ঢের কম শুনিত এবং ভুল শুনিত।’
স্রোতস্বিনী দক্ষিণপার্শ্বে ঈষৎ মুখ ফিরাইয়া একটা বহি খুলিয়া তাহার পাতা উল্টাইতে উল্টাইতে কহিল, ‘তুমি আমাকে স্নেহ কর বলিয়া আমাকে যতখানি দেখ আমি তো বাস্তবিক ততখানি নহি।’
আমি কহিলাম, ‘আমার কি এত স্নেহ আছে যে, তুমি বাস্তবিক যতখানি আমি তোমাকে ততখানি দেখিতে পাইব। একটি মানুষের সমস্ত কে ইয়ত্তা করিতে পারে, ঈশ্বরের মতো কাহার স্নেহ।”
ক্ষিতি তো একেবারে অস্থির হইয়া উঠিল; কহিল, এ আবার তুমি কী কথা তুলিলে। স্রোতস্বিনী তোমাকে এক ভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি আর এক ভাবে তাহার উত্তর দিলে।’
আমি কহিলাম, জানি। কিন্তু কথাবার্তায় এমন অসংলগ্ন উত্তরপ্রত্যুত্তর হইয়া থাকে। মন এমন এক প্রকার দাহ্য পদার্থ যে, ঠিক যেখানে প্রশ্নফুলিঙ্গ পড়িল সেখানে কিছু না হইয়া হয়তো দশ হাত দূরে আর এক জায়গায় দপ্ করিয়া জ্বলিয়া উঠে। নির্বাচিত কমিটিতে বাহিরের লোকের প্রবেশ নিষেধ, কিন্তু বৃহৎ উংসবের স্থলে যে আসে তাহাকেই ডাকিয়া বসানো যায়; আমাদের কথোপকথন-সভা সেই উৎসবসভা, সেখানে যদি একটা অসংলগ্ন কথা অনাহূত আসিয়া উপস্থিত হয় তবে তৎক্ষণাৎ তাহাকে ‘আসুন মশায় বসুন’ বলিয়া আহ্বান করিয়া হাস্যমুখে তাহার পরিচয় না লইলে উৎসবের উদারতা দূর হয়।’
ক্ষিতি কহিল, ‘ঘাট হইয়াছে, তবে তাই করো, কী বলিতেছিলে বলে। ক-উচ্চারণমাত্র কৃষ্ণকে স্মরণ করিয়া প্রহলাদ কাঁদিয়া উঠে, তাহার
৫৩