পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাঙ্গলা দেশের নদনদীর উপরে লেখা Adams Williams-এরও একখানা বই আছে যাহা আমার পড়িবার ইচ্ছা আছে।

 *  *  *

 বাঙ্গলা দেশে আমাকে বদলি করিবার জন্য বাঙ্গলা গভর্ণমেণ্টের নিকট আবেদন করিব স্থির করিয়াছি; কারণ এ জায়গাটা আমার ঠিক সহ্য হইতেছে না। এখানে আসিবার পর হইতে ডিস্‌পেপসিয়া আমার নিত্য সঙ্গী হইয়া উঠিয়াছে এবং সর্দ্দিকাশিও লাগিয়াই আছে। সর্দ্দিকাশি না বলিয়া বরং স্থানীয় ভাষায় বলা যায় ফ্লু, তবে পার্থক্য এই যে, ইহাতে জ্বর খুব বেশী হয় না। কিন্তু সাধারণতঃ ফ্লু যেরূপ কষ্ট দিয়া থাকে এখানকার ফ্লু-ও ঠিক তাহাই।

 বাবু জিতেন্দ্রিয় বসু একদা তাঁহার সাধের কাশীপুরের বর্ণনা দিতে গিয়া বলিয়াছিলেন যে, ইহা নাকি “ধূলার রাজ্য।” আমি নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারি তিনি সত্যিকারের ধূলার রাজ্য এখনও দেখেন নাই, আর সেটা হইল মান্দালয়। জনৈক কবি একবার বলিয়াছিলেন যে, মৃত্যুর কাছে বছরের সব ঋতুই সমান; মান্দালয়ের ধূলাও তেমনি বছরের ১২ মাসই দেখা যায়। কারণ পৃথিবীর এ প্রান্তে বর্ষা ঋতু বলিয়া কিছু নাই। মান্দালয়ে বাতাসে ধূলা উড়িয়া বেড়ায়; ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে উহা শরীরে প্রবেশ করে। খাদ্যের সঙ্গেও উহা গ্রহণ করিতে হয়। টেবিলে, চেয়ারে, বিছানায় সর্ব্বত্র ধূলার কোমল স্পর্শ অনুভব করা যায়। মাঝে মাঝে ধূলার ঝড়ও উঠে, তখন দূরের গাছপালা আর পাহাড় ঢাকা পড়িয়া যায়; অতএব ইহার সকল সৌন্দর্য্য না দেখিয়া কোনও উপায় নাই। বাস্তবিক মান্দালয়ের চারিদিকেই ধূলা ছড়াইয়া আছে—সর্ব্বত্র ইহা ব্যাপ্ত অতএব এক অর্থে ইহাকে দ্বিতীয় বিধাতাও বলা যায়। ঈশ্বর আমাদিগকে এই নূতন বিধাতার হাত হইতে রক্ষা করুন!

১২৬