মা,
এত দিন পত্র দিবার চেষ্টা করি নাই, কলমে ভাষা আসছিল না— হাত অবশ হয়ে যাচ্ছিল। প্রথমে যখন খবর কাগজে দেখি—তখন বিশ্বাস করিতে পারি নাই। তারপর যখন সমস্ত কাগজে একই কথা দেখলাম—তখন বাস্তবের কাছে মাথা নোয়াতে হ’ল। তিনি নিজে আমাকে লিখেছিলেন যে ২।৩ মাসের মধ্যে আরোগ্য লাভ করে আবার কর্ম্মের মধ্যে ঝাঁপ দিবেন। সকলেই আশা করেছিল যে তাঁর অসমাপ্ত কাজ তিনি সমাপ্ত করবেনই। কিন্তু এর মধ্যেই বজ্রপাত! বজ্রপাতে লোকের শরীর-মন অল্পক্ষণের জন্য অবসন্ন থাকে—কিন্তু এ হেন অশনিপাতে অবসন্নতা সহজে দূর হয় না।
প্রথম কথা মনে হ’ল—আজ আমি যে সুদূর ব্রহ্মদেশে! হৃদয়ের প্রেরণা অনুযায়ী কাজ করবার সুযোগ হইতে বঞ্চিত। এ দুঃখ আমার পক্ষে ভোলবার নয়। কারাগৃহ—কারার লৌহকপাট—কারার অসংখ্য গারদগুলি ইহার পূর্ব্বে কখনও এত বিষময় বলিয়া বোধ হয় নাই। ইচ্ছা হ’ল টেলিগ্রাম করে প্রাণের একটা কথা অন্ততঃ বলে পাঠাই—কিন্তু Conventional হয়ে যাবে—এই আশঙ্কায় তাহা করলাম না।
তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা হয় আলিপুর জেলে। তখন আমি সংবাদ পেয়েছি যে বহরমপুরে বদলি হ’ব। বিদায়ের সময়ে আমি তাঁর পায়ের ধূলা নিয়ে বললাম, “আপনার সঙ্গে বোধ হয় অনেকদিন দেখা হবে না।” তিনি উত্তরে হেসে বললেন, “না আমি তোমাদের বেশীদিন জেলে থাক্তে দিচ্ছি না।” হায়! তখন কি আমি
১৪৯