মধ্যস্থতায়। কিন্তু হায় “রাগ করিবার, অভিমান করিবার জায়গাও আজ আমাদের ঘুচে গেছে।”
অপনি এক জায়গায় লিখেছেন—“লোক নাই, অর্থ নাই, হাতে একখানা কাগজ নাই, অতি ছোট যাহারা তাহারাও গালিগালাজ না করিয়া কথা কহে না, দেশবন্ধুর সে কি অবস্থা!” সেদিনকার কথা এখনও আমার মনে স্পষ্ট অঙ্কিত আছে। আমরা যখন গয়া কংগ্রেসের পর কলিকাতায় ফিরি— তখন নানা প্রকার অসত্যে এবং অর্দ্ধ সত্যে বাঙ্গলার সব খবর কাগজ ভরপুর। আমাদের স্বপক্ষে ত কথা বলেই নাই—এমন কি আমাদের বক্তব্যটিও তাদের কাগজে স্থান দিতে চায় নাই। তখন স্বরাজ্য ভাণ্ডার প্রায় নিঃশেষ। যখন অর্থের খুব প্রয়োজন তখন অর্থ পাওয়া যায় না। যে বাড়ীতে এক সময়ে লোক ধরত না, সেখানে কি বন্ধু, কি শত্রু—কাহারও চরণধূলি আর পড়ে না। কাজেই আমরা কয়েকটী প্রাণী মিলে আসর জমাতুম। পরে যখন সেই বাড়ীর পূর্ণ গৌরব ঘুরে এল——বাহিরের লোক এবং পদপ্রার্থীরা যখন এসে আবার সভাস্থল দখল করল—তখন আমরা কাজের কথাও বলার সময় পাই না। কত পরিশ্রমের ফলে, কি রকম হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম ক’রে ভাণ্ডারে অর্থসঞ্চয় হ’ল, নিজেদের খবর কাগজ প্রকাশিত হ’ল এবং জনমত অনুকূল দিকে ফেরান হ’ল তা বাহিরের লোক জানে না—বোধ হয় কোনও দিন জানবেও না। কিন্তু এই যজ্ঞের যিনি ছিলেন হোতা, ঋত্বিক, প্রধান পুরোহিত, যজ্ঞের পূর্ণ সমাপ্তির আগেই তিনি কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেলেন! ভিতরের আগুন এবং বাহিরের কর্ম্মভার—এই দুয়ের চাপ তাঁর পার্থিব দেহ আর সহ্য করতে পারল না।
অনেকে মনে করেন যে, তাঁর স্বদেশ সেবাব্রতের উদ্দেশ্য ছিল দেশমাতৃকার চরণে নিজের সর্ব্বস্ব উৎসর্গ করা। কিন্তু আমি জানি তাঁর উদ্দেশ্য ছিল এর চেয়েও মহত্তর। তিনি তাঁর পরিবারকেও দেশমাতৃকার চরণে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন। এবং অনেকটা
১৬০