পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পায় কালই খালাস পাবে, তবে তার মনের অবস্থা কি রকম হবে—তা হয় তো কল্পনা করতে পারেন। বহুদিন যাদের দেখে নাই, বহুদিন যাদের খবর পায় নাই, বহুকাল যাদের দেখা পাবার আশা ছিল না—হঠাৎ তাদের সব কথা সব স্মৃতি যখন মনের মধ্যে ভেসে ওঠে তখন বোধ হয় মানুষের মন আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়ে। আমরা মনে করেছিলাম যে হঠাৎ খালাসের খবর পেয়ে সে আনন্দে নৃত্য করবে—কিন্তু তা যখন করলে না তখন বুঝতে পারলাম যে অত্যন্ত আনন্দের চাপে সে একেবারে বিহ্বল হয়ে পড়েছে। মনের অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করলে শুধু বলছে “কাউণ্ডে কাউণ্ডে” অর্থাৎ “ভাল ভাল।”

 তার খালাসের পূর্ব্বদিনে তাকে কাছে বসিয়ে তার বাড়ীর সব খবর জিজ্ঞাসা করলাম। শুনলাম তার দুইটি স্ত্রী, এবং দুইটি মেয়ে ও তিনটি ছেলে। এক স্ত্রীর কোন সন্তান হয় নাই। বহুকাল, অর্থাৎ প্রায় চার বৎসর, এদের সম্বন্ধে কোনও খবর পায় নাই। তাই খালাসের সময়ে তাদের মঙ্গল সম্বন্ধে অমঙ্গল চিন্তা করে মনটা আকুল হয়েছে। তারা সকলে বেঁচে আছে কিনা—তারা কেমন আছে এই সব চিন্তা এতদিন এক রকম চাপা ছিল। কিন্তু খালাসের সময়ে এই কথা মনে আসতে একদিকে আনন্দ হচ্ছে এবং অপর দিকে নানা প্রকার চিন্তা মনের মধ্যে দেখা দিচ্ছে। এই কারণে ও খালাসের খবর পেয়েও বেশী আনন্দ করতে পারে নাই।

 তারপর তার বাড়ীর অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করে শুনলাম যে সে গ্রাম্য জমিদার কি রাজা। পূর্ব্বে তারা একেবারে স্বাধীন ছিল এবং স্বাধীনতার জন্য বর্ম্মীদের রাজাদের সহিত লড়াই করেছিল। তারপর ইংরাজের অধীনে তারা গিয়ে পড়ে। মধ্যে প্রায় সাত বৎসর পূর্ব্বে, খাজনা বন্ধ করাতে ইংরাজের সহিত তাদের লড়াই হয়। সেই লড়াইতে উভয় পক্ষের অনেক লোক মরে। শেষে হার মেনে সে পলায়ন করে। প্রায় তিন বৎসর লুকিয়ে থাকবার পর তার

১৭০