পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বৈমাত্রেয় ভাই তাকে এবং তার ভাইকে ধরিয়ে দেয়। তার ভায়ের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয় এবং তার অর্থাৎ মলয়ের সাত বৎসর মেয়াদ হয়।

 তারপর মলয় তার শরীরের অনেকগুলি ক্ষতচিহ্ন দেখাইল সে সবগুলি যুদ্ধের সময়ে আঘাতের চিহ্ন। তারপর আমরা বর্ম্মাদেশের ইতিহাস শুনে দেখলাম যে তার কথা সত্য বটে। তার খালাসের পরও সেই দেশের অন্যান্য কয়েদীদের জিজ্ঞাসা করে জেনেছি যে মলয়ের কথা এক বর্ণও মিথ্যা নয়।

 একজন গ্রাম্য রাজাকে আমরা মেথর করে রেখেছি একথা শুনে আমরা লজ্জায় মাথা হেঁট করলাম। শেষে আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম সে কেন মেথরের কাজ করতে স্বীকার করল। অত্যন্ত দুঃখের সহিত সে বললে—“কি করব—জেলের হুকুম! এখানে কি আর মানুষ আছি—এখানে কুকুর হয়ে গেছি। আবার বাহিরে গেলে তখন মানুষ হব।”

 তার করুণ কাহিনী শুনে আমরা জিজ্ঞাসা করলাম—ভবিষ্যতে সে কি করবে। অনেক চিন্তা করে বললে,—“এখনও কিছু স্থির করতে পারি নাই। আমার বৈমাত্রেয় ভাই আবার শত্রুতা আচরণ করবে কিনা জানি না—কারণ আমার অবর্ত্তমানে সে-ই জমিদারী ভোগ করছিল। ভয় হয়—হয় তো আমার কপালে এখনও অনেক দুঃখ আছে।”

 যাবার সময়ে আমরা জিজ্ঞাসা করলাম—বাড়ীতে গিয়ে আমাদের কথা ভুলে যাবে কিনা। তখন গদগদ কণ্ঠে বল্লে—“বেঁচে থাকতে আপনাদের স্নেহের কথা ভুলব না—এবং আমার ছেলে ও নাতিদের কাছে আপনাদের গল্প করব।”

 এখন আপনারা বলুন তো যে এ ঘটনা সত্য বলে মনে হয়, না উপন্যাসের গল্প বলে মনে হয়? ইংরাজীতে একটা প্রবাদ আছে যে সত্য ঘটনা অনেক সময়ে গল্পের চেয়েও অলৌকিক বলে বোধ হয়। এও তাই।

১৭১