পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বর্ম্মা ভাষা ভালো রকম শিখতে পারি নাই—তবে সাধারণ কথাবার্ত্তা চালাবার মত কিছু কিছু শিখেছি। বর্ম্মাদের মধ্যেও কেহ কেহ ইংরাজী বা হিন্দুস্থানী জানে তাদের সাহায্য নিয়ে বর্ম্মা কথা আমরা বুঝে থাকি। মোটের উপর একটু অসুবিধা হলেও আমরা কোন রকমে কাজ চালিয়ে নি।

 টেনিস কোর্টের দরুন আমরা কতকটা ব্যায়াম করতে পারি। তা না হলে বোধ হয় বাতগ্রস্ত হয়ে বাড়ী ফিরতুম। এম্‌নি তো বাতের লক্ষণ দেখা দিয়েছে ব’লে বোধ হয়। পূর্ব্বে আমরা ব্যাডমিণ্টন খেলতে পেতাম। ব্যাডমিণ্টন আমি চিরকাল মেয়েদের খেলা বলে মনে করতাম এবং সেইজন্য কখনও খেলি নাই। জেলে এসে সব উল্টে যায়—তাই আবার শৈশব ফিরে আসে এবং আমরা ব্যাডমিণ্টন খেলতে আরম্ভ করি। প্রথমে যে একটু লজ্জা হ’ত না তা বলতে পারি না। তবে শাস্ত্রে বলে যে মধু না পাওয়া গেলে গুড় ব্যবহার করা উচিত। তাই অন্য খেলার অভাবে ব্যাড্‌মিণ্টন খেলা খেলে আশ মেটাতে হ’ত। আমাদের সব সময়ে জেলখানার মধ্যে আর একটা ক্ষুদ্র জেলে বাস করতে হয়—আমাদের ওয়ার্ডের (ward) বাহিরে আর কাহারও সহিত মিশিবার উপায় নাই। অধিকাংশ জেলে আমাদের কপালে এরূপ ward (ওয়ার্ড) জুটতে—যে কোন রকমে ব্যাড্‌মিণ্টন খেলার মত জায়গা করে নেওয়া যায়। এখানে একটু জায়গা বেশী থাকাতে টেনিস খেলা সম্ভব হয়েছে। তাতেও মুস্কিল এই যে বলগুলি প্রায় দেয়াল পার হয়ে বাইরে গিয়ে পড়ে। আর যে গুলি বাইরে যায় না সেগুলি দেওয়ালের গায়ে আঘাত খেয়ে আবার কোর্টের মধ্যে এসে পড়ে। তবুও—“নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।”

 পুখুরের জল বাড়বার উপায় নাই। কারণ বাড়লেই উপছে নর্দ্দমা দিয়ে বেরিয়ে যায়। আর মধ্যে মধ্যে পুখুর খালি করে নূতন জল ভরতে হয়। বস্তুতঃ চৌবাচ্চা না বলে পুখুর বলবার কোনও

১৭২