পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চিন্তা দূর করিবেন। তাঁহার কি এবার পরীক্ষা দেওয়া হইবে না?

 ভগবানের দয়ার অভাব নাই—দেখিতে বসিলে জীবনের প্রতি মুহূর্ত্তে তাঁহার দয়ার পরিচয় পাওয়া যায়। তবে আমরা অন্ধ, অবিশ্বাসী, ঘোর নাস্তিক, তাই তাঁহার দয়ার মাহাত্ম্য বুঝিতে পারি না। আর বুঝিব বা কি করিয়া? দুঃখে পড়িলে তাঁহাকে ডাকি—অনেকটা প্রাণ খুলিয়া ডাকি—কিন্তু যেই দুঃখ দূর হইল—যেই সুখের আলোক আসিতে লাগিল——অমনি আমাদের ডাকা বন্ধ হইল আর আমরা তাঁহাকে ভুলিয়া গেলাম। এইজন্যেই ত কুন্তীদেবী বলিয়াছিলেন, “হে ভগবান্! আমাকে সর্ব্বদা বিপদের মধ্যে রাখিও; তাহা হইলে আমি তোমায় সর্ব্বদা প্রাণ খুলিয়া ডাকিতে পারিব; সুখের সময় তোমাকে ভুলিয়া যাইতে পারি—অতএব আমার সুখে প্রয়োজন নাই।”

 জন্মমৃত্যু লইয়া এ জীবন—তাহাতে একমাত্র সার জিনিষ —হরিনাম। তাহা না করিতে পারিলে জীবন নিরর্থক। আমাতে পশুতে প্রভেদ এই যে পশুরা ভগবানকে বুঝিতে বা বুঝিয়া ডাকিতে পারে না আর আমরা চেষ্টা করিলে তাহা পারি। এ ভবে আসিয়া যদি ভগবানের নাম না করিতে পারিলাম তবে এখানে আসা আমার বিফল হইল। জ্ঞান বড়, বড় জিনিস—ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে তাহা ধরিবে না—তাই ভক্তি চাই, জ্ঞান এখন চাই না। তর্ক করিতে চাই না—কারণ আমি অজ্ঞ ও অন্ধ। সুতরাং এখন চাই কেবল বিশ্বাস—অন্ধ বিশ্বাস—শুধু “হরি আছেন” এই বিশ্বাস; আর কিছু চাহি না। ভক্তি বিশ্বাস হইতে আসিবে এবং জ্ঞান ভক্তি হইতে আসিবে। মহর্ষিগণ বলিয়াছেন—“ভক্তির্জ্ঞানায় কল্পতে”—ভক্তি জ্ঞানের জন্য ধাবিত হয়। লেখাপড়ার উদ্দেশ্য— বুদ্ধিবৃত্তি পরিমার্জ্জিত করা এবং সদসৎ বিবেচনা শক্তি দেওয়া। এই দুই উদ্দেশ্য সফল হইলে লেখা পড়া সার্থক হইবে। লেখা-