পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বুদ্ধি আঁটল কি করলে জল নষ্ট হবে না। অনেক চিন্তার পর সে স্নানের ঘরে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করল। তারপর জানালা দিয়ে বেরিয়ে এসে জোরে ধাক্কা দিয়ে জানলা বন্ধ করল। ছিটকিনি পড়ে ভিতর থেকে জানালা বন্ধ হয়ে গেল এবং শ্যামলালও মনে মনে খুব সন্তুষ্ট হল। স্নানের সময় যখন দরজা খোলা দরকার হল তখন শ্যামলাল মাথা চুলকোতে লাগল। আমরা তার বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে তাকে তৎক্ষণাৎ “পণ্ডিত” উপাধি দিলুম।

 শ্যামলালের উপাধির সংখ্যাও বাড়তে লাগল কিন্তু সে পণ্ডিত নামে সবচেয়ে বেশী সন্তুষ্ট রইল এবং উপাধিটি পাবার পর তার কাজের আগ্রহ আরও বেড়ে গেল।

 চুলকানি হয়েছে দেখে শ্যাম পণ্ডিত একদিন স্থির করল তার কুষ্ঠ ব্যাধি হয়েছে। কি উপায়ে কুষ্ঠ রোগের আরাম হতে পারে তা জানবার জন্য সে সকলকে জিজ্ঞাসা করতে লাগল। তারপর আর একটি ঘটনায় সে এরূপ বুদ্ধি দেখায় যে তার প্রমোশন হয়ে সে “উপাধ্যায়” উপাধি পায়। যে রকম বেগে তার বুদ্ধির বিকাশ হচ্ছে, সে যে শীঘ্র “মহামহোপাধ্যায়” নাম পাবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।

 আর একটি মজার লোক এখানে আছে। তার নাম “ইয়াঙ্কায়া”। তার আদি নিবাস মান্দ্রাজ অঞ্চলে। প্রায় চল্লিশ বৎসর পূর্ব্বে যখন ইংরাজেরা উত্তর বর্ম্মা দখল করে তখন সে ইংরাজদের সহিত এদেশে আসে। এখন তার বয়স মাত্র ৭০ বৎসর এবং জীবনে মাত্র তিনবার বিবাহ করেছে। যেমন লম্বা, তেমন চওড়া, আর পেটটা তার চেয়ে বড়। খেতে খুব ভালবাসে এবং দুনিয়ার মধ্যে পেটটা সব চেয়ে বড় সত্য একথা সে প্রাণে প্রাণে বুঝে। কোন ভাষা সে জানে না। এখন যে ভাষা বলে সেটা কারুঙ্গী (একট। মান্দ্রাজীয় ভাষা) হিন্দুস্থানী ও বর্ম্মা ভাষার একটা খিচুড়ি। সে কোন ভাষা ভাল বলতে পারে না এই গুণের জন্য তাকে প্রথমে বাঙ্গালীদের কাজের

২১২