পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 প্রায় একমাস কাল মুরগী ডিমে তা দিয়ে, ডিম ফুটে ছানা বাহির হ’ল। ইয়াঙ্কা ছিলেন সেই সব মুরগী দেখা শোনার কাজে। গোড়া থেকেই ইয়াঙ্কা প্রভু ডিম সরাতে আরম্ভ করলেন। যেখানে ডিম হয় ৫৬টা সেখানে ঘরে উঠে মাত্র ২।৩টা। বাকী কয়টা তার কৃপায় অদৃশ্য হয়। যেদিন ধরা পড়লেন, সেদিন একেবারে নেকা। তার বয়স মাত্র ৭১ বৎসর কিন্তু পেটটা অতিশয় বড়। অনেকে বলেন যে তিনি ভোলানাথের অবতার; কারণ পেটটা একেবারে মহাদেবের মত। ইয়াঙ্কার কৃপায় প্রত্যহ মুরগীর ছানা মরতে আরম্ভ করল। ১০।১২ থেকে দাঁড়াল তিনটা। সেগুলি এখনও পর্য্যন্ত জীবিত আছে। বোধ হয় মরবার আর আপাততঃ আশা নাই। একদিন তার অযত্নের দরুন চিল এসে ছোঁ মেরে একটী মুরগীর ছানা নিয়ে গেল। সকাল বেলা যখন ধরা পড়ল তখন ইয়াঙ্কা সাধু সেজে বল্লেন, “মুসীতু” অর্থাৎ “ছিল না”। অনেক ধম্‌কা-ধম্‌কির পর সত্য কথা স্বীকার করলেন।

 কিন্তু আসলে ইয়াঙ্কা লোক মন্দ নয়। সে বুঝেছে যে জগতে সার সত্য হচ্ছে পেট। “তস্মিন্ তুষ্টে জগৎ তুষ্টং”—পেট ঠাণ্ডা হলেই জগৎ সন্তুষ্ট হয়। এবং পেটের জন্য সে কোনও কাজ করতে পশ্চাৎপদ হয় না। বুদ্ধের স্তব বর্ম্মা ভাষায় সে বেশ বলতে পারে— তার কাছ থেকে আমি সে স্তব শুনে শিখেছি। যখন ফিরব তখন আপনাদের সকলকে সে স্তব শোনাব।

 বাঙ্গলা দেশ থেকে চারজন কয়েদীকে এ জেলে বদলী করে আনা হয় আমাদের কাজকর্ম্ম করার জন্য। কিন্তু তাদের মধ্যে কাজের লোক মাত্র একজন। তার উপরেই রান্নাঘরের ভার। এখানে এত রকম লোক দেখতে পাওয়া যায় যে তাতে আনন্দ যেমন পাওয়া যায়—শিক্ষাও সেরূপ হয়।

 কবিরাজী ঔষধ খেয়ে প্রায় দুই মাস বেশ উপকার পেয়েছিলাম। এখন বোধ হয় ঔষধ বদলাতে হবে কারণ বিশেষ সুবিধা বোধ

২২৮