পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাইব—এই ভরসায় আমি পত্র দিই নাই। তবে বহুকাল পরে আপনার হাতের লেখা দেখিয়া হৃদয় আনন্দে ভরিয়া গেল। কিন্তু পত্র পড়িতে পড়িতে সে আনন্দ শুকাইয়া গেল। মনে হইল, হয়তো বাহিরে থাকিলে আমরা কিছু সান্ত্বনা দিতে পারিতাম। আজ প্রায় দেড় বৎসর হইতে চলিল আমরা সকল রকমে মা-ছাড়া। কবে যে এই দীর্ঘ প্রবাসরজনীর অবসান হইবে তা শুধু ভগবানই জানেন। আমরা ক্রমশঃ যেন এই অন্ধকারে অভ্যস্ত হইয়া পড়িতেছি। বাহিরের আলোক যেন দূর হইতে দূরতর হইয়া পড়িতেছে। কারাবাসের প্রথমদিকে যে বন্ধনের জ্বালা হৃদয়ে অনুভব করিতাম তাহা ক্রমশঃ হ্রাস পাইতেছে এবং তার পরিবর্ত্তে এক নির্ব্বিকার ভাব হৃদয়কে অধিকার করিতেছে, কোন্ দিকে চলিতেছি তা সব সময় বুঝিয়া উঠিতে পারি না। আমাদিগকে প্রবাসী করিয়া তাঁর কোন্ উদ্দেশ্য সার্থক হইতেছে তাহা মন যেন বুঝিয়াও বুঝিতে পারে না। তাই সর্ব্বদা তাঁর নিকট এই প্রার্থনা করি—যেন এই সব বিপদ ও বাধা-বিঘ্নের মধ্য দিয়া আমার এই অসার, অপূর্ণ ও নীরস জীবনকে তিনি তাঁহার পানে টানিয়া তোলেন।

 তিনি যে তাঁর গূঢ় উদ্দেশ্য ফুটাইয়া তুলিবার জন্য আমাদিগকে সকল রকমে অবলম্বনহীন করিয়াছেন তা বুঝিতে পারি। কিন্তু এই দীর্ঘ দেড় বৎসরকাল অসহায় অবস্থায় থাকিয়াও কি তাঁহার দিকে অগ্রসর হইতে পারিয়াছি?

 যাক্—কি বলিতে গিয়া কি বলিতেছি। কবে আবার যে আপনার শ্রীচরণের দর্শন পাইব তাহা জানি না। তবে আপনার কথা চিন্তা না করিয়া পারি না, বোধ হয় এমন একদিনও যায় না, যে দিন আপনার কথা না মনে আসে। নিজের সর্ব্বস্ব দিয়া যদি আপনাদের কিছুমাত্র সান্ত্বনা বা সেবা করিতে পারিতাম তাহা হইলেও ধন্য হইতাম। কিন্তু তাহা বুঝি হইবার নয়।

২৩২