পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সম্বন্ধে আমার clear conscience আছে, কারণ Public-এর দেওয়া টাকার একটী পয়সারও আমি অসদ্ব্যবহার করি নাই। আমার গ্রেপ্তারের পর আমার দেয় অংশ আমার দাদা (শরৎবাবু) দিয়া আসিতেছেন। সম্প্রতি খরচ কমিয়াছে এবং আয় বাড়িয়াছে বলিয়া তাঁহাকে আর পূর্ব্বেকার মত টাকা দিতে হয় না। আমি যখন মাসে মাসে দুই শত টাকা করিয়া সেবাশ্রমের জন্য ব্যয় করিতাম, তখন অনেক বন্ধু বলিয়াছিলেন যে, আমি বৃথা ছয়-সাতটি বালকের জন্য এত অর্থ ব্যয় করিতেছি। এ টাকার সদ্ব্যবহার অন্য ভাবে হইতে পারে। কিন্তু তাঁহারা জানেন না যে, আমি খেয়ালের বশবর্ত্তী হইয়া সেবাশ্রমের কার্য্যে হস্তক্ষেপ করি নাই। আজ প্রায় ১২।১৭ বৎসর ধরিয়া যে গভীর বেদনা তুষানলের মত আমাকে দগ্ধ করিতেছে, তাহ দূর করিবার জন্য আমি এই কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিয়াছি। আমি কংগ্রেসের কাজ ছাড়িতে পারি—তবুও সেবাশ্রমের কাজ ছাড়া আমার পক্ষে অসম্ভব। “দরিদ্র নারায়ণের” সেবার এমন প্রকৃষ্ট সুযোগ আমি কোথায় পাইব। এই সেবাশ্রমের পেছনে কত ইতিহাস লুক্কায়িত আছে— কবে এই চিন্তা আমার মধ্যে প্রবেশ করে এবং কেন প্রবেশ করে—কি করিয়া আমি চিন্তারাজ্য ছাড়িয়া কর্ম্ম রাজ্যে প্রবেশ করি— সে কথা অন্য সময় বলিব। পত্রে লিখিবার চেষ্টা করিলে গ্রন্থ হইয়া যাইবে।

 অনেক কথা লিখিলাম, এখন শেষ করি। আমার কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছেন, কি উত্তর দিব? রবিবাবুর একটী কবিতা আমার খুব ভাল লাগে। কবির ভাষায় উত্তর দিলে কি ধৃষ্টতা হইবে? কবির এত আদর এইজন্য যে আমাদের অন্তরের কথা কবিরা আমাদের অপেক্ষা স্পষ্টতর ও স্ফুটতর ভাবে ব্যক্ত করতে পারেন। তাই বলি—

“এখনো বিহার কল্প জগতে
জেলখানা (অরণ্য) রাজধানী,
এখনো কেবল নীরব ভাবনা
কর্ম্মবিহীন বিজন সাধনা

২৫৬