পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আসিতেছে। অন্তরের মধ্যে বাস করা ও অন্তরের আত্মবিকাশের স্রোতে জীবনতরী ভাসাইয়া দেওয়ার মধ্যে পরম শান্তি আছে এবং বেশীদিন রুদ্ধ অবস্থায় বাস করিতে হইলে অন্তরের শান্তিই একমাত্র সম্বল—তাই সুদীর্ঘ কারাবাসের সম্ভাবনায় আমি এক অপূর্ব শান্তি পাইতেছি। Emerson বলিয়াছেন, “We must live wholly from within.” এ-কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য এবং এই সত্যের উপর আমার বিশ্বাস দিন দিন দৃঢ়তর হইতেছে।

 আমার মত যাঁহাদের অবস্থা তাঁহারা যদি বাহিরের ঘটনার দ্বারা জীবনের সার্থকতা বা বিফলতা নির্দ্ধারণ করেন তবে—“মৃত্যুরেব ন সংশয়ঃ।” যে মাপকাঠির দ্বারা আমাদের (অর্থাৎ বন্দীদের) বিচার করিতে হইবে—তাহা অন্তরের, বাহিরের নয়। কারণ বাহিরের মাপকাঠিতে হয় তো আমাদের জীবনের মূল্য শূন্যবৎ। এইখানেই যদি যবনিকাপাত হয় তবে বাস্তব সংসারের উপর আমাদের জীবনের স্থায়ী ছাপ না থাকিতেও পারে। কিন্তু জীবনে যদি আর কোনও কাজ না করিতে পারি—আদর্শকে বাস্তবের ভিতর দিয়া যদি ফুটাইয়া তুলিবার সুযোগ না পাই—তাহা হইলেও আমার জীবন ব্যর্থ হইবে না। মহান্ আদর্শ যদি প্রাণের মধ্যে গ্রহণ করিয়া থাকি—কায়মন যদি সেই মহান্ আদর্শের সুরে বাঁধিয়া থাকি— আদর্শের সহিত নিজের অস্তিত্ব যদি মিশিয়া থাকে—তাহা হইলে আমি সন্তুষ্ট—আমার জীবন জগতের কাছে ব্যর্থ হইলেও, আমার (এবং বোধ হয় ভাগ্যবিধাতার) কাছে ব্যর্থ নয়। জগতে সব কিছুই ক্ষণভঙ্গুর—শুধু একটা বস্তু ভাঙ্গে না বা নষ্ট হয় না—সে বস্তু,— ভাব বা আদর্শ। আমাদের আদর্শ সমাজের আশা আকাঙ্ক্ষা। আমাদের চিন্তাধারা—অবিনশ্বর। ভাবকে প্রাচীরের দ্বারা কি কেহ ঘিরিয়া রাখিতে পারে?

 ষোল আনা দিতে হইলে অপর দিকে আদর্শকে ষোল আনা পাওয়া চাই। অথবা আদর্শকে ষোল আনা পাইতে হইলে নিজের

২৯৭