পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার প্রাণে বড় লাগল। আজ বাস্তবিক দেশের অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাই; শুধু তাহা নয়—বোধ হয় সন্তানের মান রাখতেও জননীকে অগ্রসর হতে হবে—দেশ এমনই হতশ্রী ও হীনবীর্য্য হয়ে পড়েছে।

 আমার সময়ে সময়ে মনে হয় যে আপনি যদি বাহিরের পাঁচরকম জনহিতকর কাজে মন দিতে পারতেন—তা’ হ’লে বোধ হয় ভিতরের জ্বালাটা কিয়ৎপরিমাণেও কমত। পারিবারিক জীবনের সুখ-দুঃখের দ্বারা কি আমাদের জীবনটা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত? আপনি ছিলেন রাজরাজেশ্বরী—আজ আপনি পার্থিব দৃষ্টিতে রিক্তহস্তা। এ কথা যে ভাবে—তারই হৃদয়ে তীব্র জ্বালা না হয়ে পারে না। কিন্তু আমাদের সান্ত্বনা এই যে ভারতের নরনারী অনাদিকাল হ’তে রাজার ঐশ্বর্য্য অপেক্ষা সন্ন্যাসের গৌরবকে অধিকতর শ্লাঘ্য, শ্রেয় ও পূজ্য বলে মনে করে আসছে। সন্ন্যাসের গৌরবময় প্রভাবে আপনার দেশবাসীর হৃদয়ে আপনার স্থান যে কত উঁচুতে উঠেছে তা বোধ হয় আপনি জানেনও না। জানি না এ সব কথা বলা আমার পক্ষে চাপল্য হ’ল কি না কিন্তু আমার justification শুধু এই যে, যে তীব্র জ্বালা আপনাকে নিরন্তর দগ্ধ করছে তাহা অতি সামান্যভাবেও আমাকে সময়ে সময়ে পীড়া দেয়—এবং একথা বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না যে বাঙ্গলার অসংখ্য যুবককেও পীড়া দেয়।

 পূর্ব্ব পত্রে আপনি লিখেছিলেন—“অভিশপ্ত জীবনের সব কাজই শেষ হইয়া গিয়াছে, এখন শুধু শেষ প্রতীক্ষায় নীরবে বসিয়া থাকা ছাড়া আর কিছু খুঁজিয়া পাই না। জানি না কত যুগ-যুগান্তরে আমার অভীষ্ট মিলিবে।”

 আমার আশঙ্কা হয় যে অত্যধিক brooding-এর ফলে আপনি সময়ে সময়ে ভুলে যান যে দেশের বুকে— এবং আমাদের বুকে আপনার আসন কোথায়। তা যদি বিস্মৃত না হতেন তবে নিজের

৩২১