পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জীবনকে ভীষণ পারিবারিক দুর্ঘটনা সত্ত্বেও “অভিশপ্ত” বলতে পারতেন না। ভগবানের নিকট যিনি প্রিয় তাঁর উপরেই বারে বারে দুঃখ ও বিপদ বর্ষিত হয়—এ কথা কি একেবারে মিথ্যা? আর, মানুষের হৃদয় যত বড় হয় তার দুঃখও তত বেশী জোটে—একথাও কি একেবারে মিথ্যা? আমাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষা আপনি পূরণ করুন— আপনার আসন চিরকাল দেশের বুকে অটুট থাকবে। যে ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালবাসা আপনার চরণে দেশের লোক ঢেলে দিয়েছে, দিচ্ছে এবং দিবে—তার দশমাংশও কি কোনও তথাকথিত ভাগ্যবান লোক পেতে পারেন? কত আশা-আকাঙ্ক্ষা বুকে করে নিয়ে দেশবন্ধু আমাদের ফেলে চলে গেলেন। তাঁর সেই সব স্বপ্নই তার সর্ব্বশ্রেষ্ঠ Legacy। যে Legacy আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আপনিও পেয়েছেন। সুতরাং আপনি কি বাস্তবিকই অন্তরের সহিত বলিতে পারেন—আপনার কাজ শেষ হয়েছে এবং যাবার সময় হয়েছে? বললে ধৃষ্টতা হয় কিন্তু তবুও বলতে ইচ্ছা হচ্ছে যে আপনার যিনি ইষ্ট তিনি কখনও এ বিষয়ে আপনার কথা সমর্থন করবেন না— বরং আমার কথাই সমর্থন করবেন।

 আপনি লিখেছেন—“জড় প্রকৃতির সাথে এখানেই আমার অন্তরপ্রকৃতির যথার্থ মিলন। এই ঘন ঘোর অন্ধকার আমার বেশ লাগে।” আপনার হয়তো সব সময়েই অন্ধকার আজকাল ভাল লাগতে পারে— কিন্তু সকলেরই অন্ততঃ মধ্যে মধ্যে অন্ধকার ভাল লাগে। অন্ধকারকে ভালবাসলে তার বুকে যে আলো লুকান আছে—তাকে কি ভালবাসতে নাই? সে বেচারীর অপরাধ কি? সে তো সকলকে সুখী করতে চায়, আলো ও আনন্দ দিতে চায়।

 আপনি হয় তো কোনও বন্ধনের মধ্যে আসতে চান না—সে বন্ধন কাজেরই হউক বা মানুষেরই হউক। কিন্তু আমাদের তো কোন উপায় নাই। যে দিন “মা” বলেছি সে দিনই সম্বন্ধ স্বীকার করে নিয়েছি। এ সম্বন্ধ তো অন্ততঃ ইহজীবনে ছিন্ন হবার নয়। সংসারের প্রাচীর

৩২২