পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেদিন আমাদের পক্ষে মহা আনন্দের দিন—কোনও দুঃখ নাই— কোনও কষ্ট নাই—পুনর্জ্জন্ম কষ্ট আর আমাদের ভোগ করিতে হয় না— তখন আমরা নিত্যানন্দে বিরাজ করি। যখন ভাবি তিনি সেই নিত্যানন্দ ধামে গিয়াছেন—তিনি অমরগণের সহিত এক পংত্তিতে বসিয়া স্বর্গীয় সুধা পান করিতেছেন তখন আর দুঃখিত হইবার কারণ দেখি না। তিনি যখন সেই সদানন্দপুরে গিয়া মহাসুখে আছেন তখন আমরা যদি তাঁহার সুখেই সুখী হই তবে আমাদের শোকগ্রস্ত হইবার কোনও কারণ নাই। দয়াময় ভগবান যাহা করেন জগতের মঙ্গলের জন্যই করেন। আমরা প্রথমে ২ বুঝিতে পারি নাই কারণ তখন ফল ধরে নাই। যখন ফল পাকে তখন আমরা হৃদয়ের ভিতরে বুঝিতে পারি “বাস্তবিক দয়াময় হর যাহা করেন মঙ্গলের জন্যেই করেন।” ভগবান্ যখন তাঁহার উদ্দেশ্য সাধন করিবার জন্য আমাদের নিকট হইতে তাঁহাকে কাড়িয়া লইয়া সিয়াছেন তখন মিছামিছি আমাদের শোকাকুল হওয়া উচিত নহে—কারণ জিনিষ তাঁহারই—তাঁহার ইচ্ছা হইলে অমনি তিনি কাড়িয়া লইবেন — আমাদের তাহাতে অধিকার কি আছে।

 আবার ভগবানের ইচ্ছায় তিনি যদি তাঁহার বিপথগামী ভ্রাতৃবৃন্দকে ধর্ম্মপথ দেখাইবার জন্য এবং পবিত্র সনাতন ধর্ম্মে দীক্ষিত করিবার জন্য পুনরায় মানবদেহ ধারণ করিয়া থাকেন বা শীঘ্রই করিবেন তবে তাহাতেও আমাদের দুঃখিত হওয়া উচিত নহে। কারণ তাহাতে জগতের অশেষ কল্যাণ সাধিত হইবে। যাহাতে জগতের কল্যাণ হইবে, আমরা ত তাহার বিরোধী হইতে পারি না। জগতের মঙ্গলই প্রত্যেক মানুষের পক্ষে মঙ্গলকর। আমরা ভারতবাসী— অতএব ভারতের মঙ্গলই আমাদের মঙ্গল। তিনি যদি পুনরায় জন্ম পরিগ্রহ করিয়া আমাদের ভ্রাতৃকল্প ভারত সন্তানদিগকে ধর্ম্মনিষ্ঠ করিতে পারেন তাহা হইলে আমাদের যারপরনাই আনন্দিত হওয়া উচিত। গীতায় ভগবান স্বয়ং বলিয়াছেন:

১৭