পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আমরা বরাবরই তাঁহার নিকট কৃতজ্ঞতার ঋণে আবদ্ধ বোধ করিয়াছি। দেশবন্ধুও উহা স্বীকার করিয়াছেন এবং আজ যদি তিনি জীবিত থাকিতেন তাহা হইলে তিনি নিশ্চয়ই তাঁহার জন্য কিছু করিতেন। তাঁহার সম্বন্ধে দেশবন্ধুর কিরূপ গভীর আগ্রহ ছিল উহা আমার অজানা নাই। সেই সময়ে অমূল্যবাবুর চাকুরী যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা ছিল না; তাই আমরা তাঁহার ভাইকে (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বি-এ পাশ করিয়াছে) কর্পোরেশনে মোটামুটি ভাল একটি চাকুরী দিতে চাহিয়াছিলাম। অমূল্যবাবুর ভাই-এর দরখাস্ত তাঁহার কাছেই ছিল, আমাকে যদি হঠাৎ গ্রেপ্তার করা না হইত তাহা হইলে আমি তাঁহার জন্য কিছু করিতে পারিতাম বোধহয়।

 যাঁহারা জেলে ছিলেন ও সেখানকার কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলার নির্দ্দয় নির্য্যাতন ভোগ করিয়াছেন তাঁহারাই শুধু বুঝিতে পারিবেন যে, অমূল্যবাবুর এই সাহায্য কতখানি মূল্যবান ছিল এবং কি পরিমাণ ঝুঁকি ও বিপদের দায়িত্ব লইয়া তাঁহাকে উহা করিতে হইয়াছে। আপনি বোধহয় জানেন যে, সামরিক শৃঙ্খলার মতই জেলের আইনকানুনও অত্যন্ত কঠোর; সেখানে কেহ যদি রাজবন্দীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করে বা তাহাদের কোনও কাজ করিয়া দেয় তাহা হইলে তাহাকে চরম শাস্তি ভোগ করিতে হয়। অমুল্যবাবু নিজের কাজে অবহেলা ঘটাইয়া দেশের কাজে যাঁহারা দণ্ড ভোগ করিতেছিলেন তাঁহাদের সাহায্য করিতে গিয়া সরকারের কোপদৃষ্টিতে পড়িয়াছিলেন। তাঁহার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হইয়াছিল উহা খুবই সামান্য—এবং এ অপরাধে কাহাকেও শাস্তি দেওয়া হয় না বা চাকুরী হইতে বরখাস্ত করা হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে কারণটা ছিল রাজনৈতিক—গোপন পুলিস ও বিভাগীয় রিপোর্টের দরুনই তাঁহার ভাগ্য এভাবে নির্দ্ধারিত হইয়াছে।

 আমি—এবং সম্ভবতঃ আরও শত শত রাজবন্দী—অমূল্যবাবুর প্রতি শ্রদ্ধা ও কর্ত্তব্যবোধে তাঁহার এই দুঃসময়ে কিছু করা প্রয়োজন বোধ

৩২৭