পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার সুবিধার জন্য আপনি যদি কর্ত্তব্যহানি করে বা নিজের কষ্ট করে এখানে থাকতেন তাতে আমি বিশেষ দুঃখিত হতুম। আমি যে রাস্তায় চলেছি তাতে নিজের সুবিধা বা সুখের জন্য কাহাকেও কষ্ট বা অসুবিধায় ফেলা আমার পক্ষে মহাপাপ। আদর্শটা বড় কঠিন তা আমি জানি এবং আমার জন্য অপরের যে অসুবিধা ও কষ্ট হয়, তাহা সব সময়ে নিবারণ করা যায় না—তবুও সাধ্যমত আমাকে এই আদর্শটা সামনে রেখে কাজ করে যেতে হবে।

 টাকা সম্বন্ধে যা লিখেছেন সে কথা ঠিক, কিন্তু আমি যা লিখেছিলুম সে কথাও ঠিক। টাকা যে রোজগার করবে তার পক্ষে “টাকা মাটী, মাটী টাকা”—এই ভাব হৃদয়ে রাখা ভাল। তা’ হ’লে মানুষ স্বার্থপর বা কৃপণ কখনও হবে না। কিন্তু আমার দিক থেকে এ কথা বল খাটে না। আমার কাছে প্রত্যেক টাকাটীর মূল্য খুব বেশী। যে টাকাটী আমার নিজের জন্য ব্যয় করি, প্রতি মুহূর্ত্তে মনে হয় যে ঐ টাকা অপরের জন্য ব্যয় করতে পারলে আমি বেশী সুখী হতুম। এ ভাব যেতে পারে না—এবং বোধ হয় যাওয়া উচিত নয় (অবশ্য আমি এখানে আমার দিক থেকেই বলছি—আপনার দিক থেকে নয়)। নিজের টাকাটা নিঃশেষে জনহিতের জন্য বিলিয়ে দিতে হবে—এইটা যখন আদর্শ করেছি তখন কোনও প্রকার স্বার্থপরতাকে যদি মনের মধ্যে স্থান দিই তা হলে তো আমি ভরাডুবি হব। এ সব কথা বলা বা লেখা সত্ত্বেও আমি যথেষ্ট স্বার্থপর এবং নিজের জন্য আমি অনেক কিছু করি। তার কারণ একদিনে আদর্শে পৌঁছান যায় না এবং স্বার্থপরতা সম্পূর্ণভাবে দূর করতে হলে অনেকদিন ধরে সাধনা করা চাই।

 ন-বৌদিদি যদি নিজের অসুবিধা করে বা ন-দাদার অসুবিধা করে আমাদের জন্য এখানে আসতেন, তাতে আমি মোটেই সুখী হতুম না। তবে যদি ছায়ার বা রাধুর জন্য বা নিজের একটু হাওয়া পরিবর্ত্তনের জন্য আসতেন তাতে সুখী হতুম—সে কথা বলা বাহুল্য। আমাকে সর্ব্বদা সকল রকম অবস্থার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে এবং

৩৩৯