পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সুতরাং ছেলেদের পক্ষে পড়া খুব সহজ। মহাভারত ও রামায়ণ আমাদের সভ্যতার মূলভিত্তি, একথা আমি যত বড় হচ্ছি তত বুঝতে আরম্ভ করেছি। দুঃখের বিষয় যে মহাভারত ও রামায়ণ আগাগোড়া ভাল করে কোনও দিন পড়লাম না।

 অশোককে আমি বলেছি যে কতকগুলি বই যাহা আমার দরকার— যেন আলাদা করে রাখে। কোনও লোক মারফৎ পাঠানর যদি সুবিধা কখনও হয় যেন পাঠিয়ে দেয়। সেই বইগুলির মধ্যে বাঙ্গলা অভিধান (যা আমি রেঙ্গুন থেকে এনেছি) ও Shakespeare's Works যেন রেখে দেয়। ছোট Type-এর একটা বইতে Shakespeare-এর Complete Works আছে—আমি সেই বইটা চাই। বোধ হয় বইটা বড় বাড়ীতে আছে।

 আপনার “Mother” কি পড়া শেষ হ’ল? কেমন লাগল?

 আপনারা সকলে হঠাৎ চলে যাওয়াতে একটু মুস্কিলে পড়েছিলুম। খালি বাড়ীটা খাঁ খাঁ করতে লাগল—মনটা কেমন করে উঠল—দৈনন্দিন জীবনের খেইগুলো যেন কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গেল— একটু কষ্ট হয়েছিল বল্লে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না। বহুকাল এরূপ ভাব আমার মনে স্থান পায় নাই। আমি মনে করতুম যে আমি মায়া-মমতার বাহিরে। তাই একটু ঘা দিয়ে প্রকৃতি আমাকে বুঝিয়ে দিলেন যে এখনও একেবারে মমতাহীন হতে পারিনি। এটা দুঃখের কথা কি সুখের কথা তার বিচার এখন করব না।

 প্রথম আঘাতটার পর আমি চিন্তা করতে লাগলুম কেন আমার এরূপ মনের অবস্থা হ’ল। সে চিন্তা এখনও চলছে। আমার মত অবস্থা যাদের—তারা যদি একেবারে মমতাহীন হতে না পারে তবে তাদের ভাগ্যে কষ্টই বেশী জুটবে। তিন বৎসর পূর্ব্বে কারার আহ্বান যখন আসে এবং আমি শয্যা ত্যাগ করে আলীপুর জেলের দিকে রওনা হই— তখন তো একবারের তরে মন কেমন করেনি—বেশ নির্ব্বিকার ভাবে চলে গেলুম এবং আড়াই বৎসরও বেশ

৩৪৮