পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নির্ব্বিকার ভাবে কাটিয়ে দিলুম। এই সময়ে জীবনের প্রতি মমতা একরকম ত্যাগ করেছিলুম। কিন্তু তার জন্যও তো কোন কষ্ট হয়নি। তবে এ অবস্থা আমার কেন হল? এটা কি মনের দুর্ব্বলতা, না বয়সের প্রভাব, না বহুকাল বাড়ী ছাড়া হওয়ার পরিণাম?

 এখন আবার মনটা বসতে আরম্ভ করেছে। অবশ্য Company-র অভাব বোধ করি। কিন্তু তাতে আমার বিশেষ অসুবিধা হয় না। নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, চারিদিকে পাহাড়ে শ্রেণী, বন-জঙ্গলের মধ্যে আলোছায়ার লুকোচুরি—ঝরনার অবিরাম কলকল নাদ—এ সব নিয়ে বেশ আছি। তাতে শরীর ও মন বেশ স্নিগ্ধ হয়। আকাশ যখন একটু পরিষ্কার হয় তখন বাহিরে বেরিয়ে পড়ি এবং প্রকৃতির নীরব ভাষা আমার অন্তরে প্রবেশ করে—আর মনে পড়ে সেই কবির কথা—

And this our life, exempt from public haunt,
Finds tongues in trees, books in the running brook,
Sermons in stones, and good in every thing.

বহুলোকের মাঝে থাকলে এ অনুভূতিটা হয়তো পেতুম না। প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের মধ্যে নিজের প্রাণকে মিশিয়ে দেওয়া, মনটাকে সংযত করে প্রকৃতির ভাষা বুঝবার চেষ্টা করা—এটা অবশ্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তথাপি সামান্য ভাবেও তাহা করতে পারলে প্রাণটা আনন্দে ভরে যায়।

 যাক্ অনেক বাজে কথা বক্‌লুম—কিছু মনে করবেন না। ইংরেজের সঙ্গে ঝগড়া-ঝাঁটি ও একত্র ঘর করে আমার মত মুখচোরা লোকও বাধ্য হয়ে বাচাল হয়েছে।

 কাউন্সিলের সময়ে কি করব এখনও স্থির করি নাই। আপনাদের পূজার ছুটির Programme যখন স্থির হবে তখন আমাকে জানাবেন।

 আপনার শরীর এখন কেমন আছে? রাত্রে ঘুম ভাল হয়—না আগেকার মতই অনিদ্রা? যন্ত্রণা গেছে তো?

৩৪৯