পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কি ভীষণ অবস্থা! ছি! ছি!! ছি!!! প্রাচীন কালের সেই পবিত্র ব্রাহ্মণকে দেখুন, আর আধুনিক কালের পাপী ব্রাহ্মণকে দেখুন। আজকাল যেখানে ধর্ম্মের নাম সেইখানেই যত ভণ্ডামী এবং যত অধর্ম্ম।

 হায়! হায়!! আমাদের কি অবস্থা! আমাদের ধর্ম্মের কি অবস্থা!

  মা, এ সব কথা যখন আপনার হৃদয়ে প্রবেশ করে তখন কি আপনার প্রাণকে আকুল করিয়া ফেলে না? আপনার প্রাণ কি কাঁদে না?

 আমাদের দেশের অবস্থা কি দিন দিন এইরূপ অধঃপতিত হইতে থাকিবে—দুঃখিনী ভারতমাতার কোন সন্তান কি নিজের স্বার্থে জলাঞ্জলি দিয়া মা-এর জন্য নিজের জীবনটা উৎসর্গ করিবে না?

 মা, আমরা আর কয়দিন ঘুমাইয়া থাকিব? আর কয়দিন আমরা পুতুল লইয়া খেলিতে থাকিব? দেশের ক্রন্দন কি আমাদের কর্ণে আস্‌ছে না? আমাদের লুপ্তপ্রায় সনাতন ধর্ম্ম কাঁদিতেছে— তাহার ক্রন্দন কি প্রাণকে অস্থির করিতেছে না?

 বসিয়া ২ আর কয়দিন দেশের এবং ধর্ম্মের এই অবস্থা দেখিব? আর বসা চলে না—আর ঘুমান চলে না—এখন নিদ্রা ত্যাগ করিয়া আলস্য ত্যাগ করিয়া কর্ম্মসাগরে ঝাঁপ দিতে হইবে, কিন্তু হায়! এ স্বার্থপর যুগে নিজের স্বার্থে জলাঞ্জলি দিয়া কয়জন স্বার্থত্যাগী সন্তান মা-এর জন্য কর্ম্মসাগরে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত? মা, আপনার এ সন্তান কি প্রস্তুত নহে?

 ৮৪ জনমের পর আমরা এই দুর্ল্লভ মনুষ্যজন্ম পাইয়াছি—বুদ্ধি, বিবেক, আত্মা প্রভৃতি পাইয়াছি কিন্তু এ সমস্ত পাইয়াও যদি পশুর ন্যায় আহার নিদ্রায় পরিতুষ্ট থাকি—পশুর ন্যায় ইন্দ্রিয়ের দাসত্ব স্বীকার করি—পশুর ন্যায় স্বার্থ লইয়া ব্যস্ত থাকি—পশুর ন্যায় যদি ধর্ম্মহীন জীবন অতিবাহিত করি তবে কেন এই মনুষ্য জঠরে আমাদের জন্ম? পরের জন্য জীবনই প্রকৃত জীবন!

২১