পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লিখিয়াছি। সেই সময়ে হৃদয়ে যে চিন্তা সর্ব্বোপরি ছিল আমি শুধু তাহাই প্রকাশ করিয়াছিলাম। হয়ত রাত্রির গভীর নিস্তব্ধতা—কারণ তখন প্রায় মধ্য রাত্রি—এই সব বিচিত্র অনুভূতির উন্মেষ ঘটাইয়াছিল। আমার বিশ্বাস প্রত্যেকেই অনুরূপ অনুভূতি লাভ করিয়া থাকিবেন; বিশেষতঃ যাঁহারা বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাঁহাদের অভিজ্ঞতা তীব্রতর হইয়াছিল। ইহা এমন একটি আবেগপূর্ণ মুহূর্ত্ত যে আমার পক্ষে তাহা সহ্য করা খুবই কঠিন হইত। না থাক; যাহা অতীত, তাহার কথা তুলিয়া, আপনাকে বিষন্ন ও বিচলিত করিতে চাই না।

 সেখানে বাংলার ঋষি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্বন্ধে আপনি হয়ত অনেক কিছু পড়িবেন ও শুনিতে পাইবেন। তাঁহার সম্বন্ধে পড়িয়া ও বিদেশীরা তাঁহাকে যে সম্মান দেখাইয়াছে তাহা জানিয়া আমরা সকলে এত গৌরব অনুভব করি যে, তাহাতে সাময়িক ভাবে হইলেও আমরা বাংলা ও ভারতের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধেও আশান্বিত হই। আমি আত্ম-অনুশোচনায় পীড়িত বোধ করি যখন ভাবি বাংলা দেশ তাঁহার প্রতিভার প্রতি কত উদাসীন ছিল; যখন ভাবি তাঁহার অমানুষিক প্রতিভাকে অস্বীকারের অন্ধকারে কতদিন আচ্ছন্ন রাখিয়া ছিল; অথচ বিদেশীরা, যাহারা বিজাতীয় ভাষাভাষী, যাহাদের চিন্তা ও অনুভূতি কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের সম্পূর্ণ বিরোধী, তাহারাই তাঁহার প্রতিভাকে রাহুমুক্ত করিয়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবির আসনে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। আমরা কি অদ্ভুত; আমাদের হৃদয়ে বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নাই। তাই কবি বলিয়াছেন:

“জ্ঞান হোক মহীয়ান নিজ মহিমাতে
তবু যেন শ্রদ্ধা রয় সাথে।”

 আমার বিশ্বাস একদিন রবি ঠাকুরের কবিতাগুলির মর্ম্ম আমি উপলব্ধি করিতে পারি।

 কোন পুরাতন বন্ধুর সহিত দেখা হইয়াছে কি? তাঁহাদের মধ্যে শ্রীযুক্ত বীরেন বসু আছেন কি?

৩১