পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অপূর্ব্ব দৃশ্যাবলী যেন আমার চক্ষের সম্মুখে একের পর এক ফিরিয়া আসে। পুরীর নীল সমুদ্র, যেখানে সুনীল জলরাশি উন্মাদ তরঙ্গ মালায় বালুকা বেলায় আছাড় খাইয়া পড়িতেছে—তাহাদের উপর যেন মাঝে মাঝে শুভ্রতার স্পর্শ, নীল আকাশের দিকে হাত বাড়াইয়া আকাশের সঙ্গ কামনা করিতেছে—যেন আমার নয়ন সম্মুখে শিলাকীর্ণ নগ্ন নারাজ পর্ব্বত বিশাল মহানদীর তীরে মহীয়ান উচ্চতায় বিরাজমান। ভুবনেশ্বরের উদয়গিরি ও খণ্ডগিরির ঐতিহাসিক গুহাবলী—যাহা সব আমি পূর্ব্বে দেখিয়াছি এখন আমার মানসপটে ক্রীড়াশীল হইয়া উঠিয়াছে। এখানে আমার চক্ষের সম্মুখে “Happy-Snowdon” চিত্রখানি রহিয়াছে! ইহা কি অপূর্ব্ব। আকাশে ক্রীড়াশীল চঞ্চল রং-এর মেলা, তুষারমৌলী পর্ব্বতশিখরে প্রতিফলিত নিম্নে সুশীতল হ্রদের জলরাশিতেও যেন সেই সুমহান বর্ণনাবলীর প্রতিফলন। পর্ব্বতের তুষারশীর্ষে উজ্জ্বল, রক্তাভ ছটা। এই সবকিছু যেন হিন্দু পুরাণে বর্ণিত হেমকূট পর্ব্বতের ছবি অথবা গ্রীক দেব-দেবীদের বাসভূমি মাউণ্ট অলিম্পাস।

 জানি না কেন এই সব আবোল তাবোল লিখিয়া আপনার সময় নষ্ট করিতেছি। কিন্তু কি যেন ভিতর হইতে আমাকে উদ্বুদ্ধ করিতেছে। জানি না হয়ত আপনার পক্ষে ইহা ক্লান্তিকর হইতেছে।

 পক্ষকাল পূর্ব্বে মাতাঠাকুরাণীর নিকট আপনি সুনির্ব্বাচিত চিত্রাবলী সম্বলিত পোষ্ট কার্ডের প্যাকেট পাঠাইয়াছেন। আপনার নির্ব্বাচন অনবদ্য। এরূপ অপূর্ব্ব দৃশ্যাবলীর সঙ্কলন দুর্ল্লভ রুচিজ্ঞানের পরিচায়ক। মাতাঠাকুরাণী যখন সর্ব্বোৎকৃষ্টখানি নির্ব্বাচন করিতে বলিয়াছিলেন তখন আমি বলিয়াছিলাম যে সবগুলিই অপূর্ব্ব ও অতুলনীয়। চিত্রগুলি এতই সুন্দর যে হয়ত সৌন্দর্য্যের আতিশয্যে স্বর্গকেও নরক করিয়া তুলিতে পারে। সত্যানুগ না হইলেও তাহা মনোমুগ্ধকর। আমরা চিত্রগুলি সাতিশয় উপভোগ করিয়াছি। কয়েকখানি আমি নিজের কাছে রাখিয়া দিয়াছি।

৩৩