ভারতী বলিল, আপনাকে আসতেই হবে।
মায়ের কাছ থেকে চিরদিন আলাদা হয়ে থাকবো?
তাঁকে রাজি করে সঙ্গে নিয়ে আসুন। আমি নিশ্চয় জানি, তিনি আসবেন।
অপুর্ব্ব হাসিয়া কহিল, কখ্খনো না। মাকে আপনি জানেন না। আচ্ছা, ধরুন যদি তিনি আসেন, তাঁকে দেখবে কে এখানে?
ভারতীও হাসিয়া কহিল, আমি দেখবো।
আপনি? ঘরে ঢুকলেই ত মা হাঁড়ি ফেলে দেবেন।
ভারতী জবাব দিল, কতবার দেবেন? আমি রোজ রোজ ঘরে ঢুকবো। দুজনেই হাসিয়া উঠিল! ভারতী সহসা গম্ভীর হইয়া কহিল, আপনি নিজেও ত হাঁড়ি ফেলার দলে, কিন্তু হাঁড়ি ফেলে দিলেই যদি সব ল্যাঠা চুকে যেতো, পৃথিবীর সমস্যা তাহলে খুব সোজা হয়ে উঠতো। বিশ্বাস না হয় তেওয়ারীকে জিজ্ঞাসা করে দেখবেন।
অপূর্ব্ব স্বীকার করিয়া কহিল, তা সত্যি। সে বেচারা হাঁড়ি ফেলবে বটে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে চোখ দিয়ে তার জলও পড়বে। আপনাকে সে এত ভক্তি করে যে, একটু জপালে হয়ত সে ক্রীশ্চান হতেও রাজি হয়ে পড়ে, বলা যায় না।
ভারতী কহিল, সংসারে কিছুই বলা যায় না। চাকরের কথাও না, মনিবের কথাও না। এই বলিয়া সে হাসি গোপন করিতে যখন মুখ নীচু করিল, তখন অপূর্ব্বর নিজের মুখখানা একেবারে আরক্ত হইয়া উঠিল, কহিল, সংসারে এটুকু কিন্তু স্বচ্ছন্দে বলা যেতে পারে যে চাকর ও মনিবের বুদ্ধির তারতম্য থাকতে পারে।
ভারতী মুখ তুলিয়া কহিল, আছেই ত। সেই জন্য তার রাজি হ’তে দেরি হ’তে পারে, কিন্তু আপনার হবে না। তাহার চোখের দৃষ্টি চাপা হাসির বেগে একেবারে চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছিল, অপূর্ব্ব পরিহাস বুঝিতে পারিয়া খুশী হইয়া কহিল, আচ্ছা, তামাসা নয়, বাস্তবিক বলচি, আমি ধর্ম্ম ত্যাগ করিতে পারি এ আপনি ভাবতে পারেন?
ভারতী কহিল, পারি।
সত্যিই পারেন।
সত্যিই পারি।
অপূর্ব্ব কহিল, অথচ, সত্যিই আমি প্রাণ গেলেও পারিনে।
ভারতী বলিল, প্রাণ যাওয়া যে কি জিনিস সে তো আপনি জানেন না। তেওয়ারী জানে। কিন্তু, এ নিয়ে তর্ক করে আর কি হবে, আপনার মত অন্ধকারের মানুষকে আলোতে আনার চেয়ে চের বেশি জরুরী কাজ আমার এখনো বাকী। আপনি বরঞ্চ একটু ঘুমোন।
অপূর্ব্ব বলিল, দিনের বেলা আমি ঘুমুইনে। কিন্তু জরুরী কাজটা আবার
১২৮