পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 একজন মাতাল হাঁ করিয়া শুনিতেছিল, সে কহিল, বাবা! পারিনে কি? এমন একটি বণ্টু ঢিল করে রেখে দিতে পারি, যে—কড় কড় কড়াৎ! ব্যস? অর্দ্ধেক কারখানাই ফরসা!

 ভারতী সভয়ে বলিয়া উঠিল, না না, দুলাল, ওসব কাজ কখ্‌খনো ক’রো না। ওতে তোমাদেরই সর্ব্বনাশ; হয়ত লোক মারা যাবে, হয়ত—না না, এসব কথা স্বপ্নেও ভাবতে যেও না দুলাল। ওর চেয়ে ভয়ানক পাপ আর নেই।

 লোকটা মাতালের হাসি হাসিয়া বলিল, নাঃ—তা কি আর জানিনে! কথার কথা বলচি, আমরা পারিনে কি!

 ভারতী বলিতে লাগিল, তোমাদের সৎপথে, সত্যিকার পথে দাঁড়ানো চাই—তাতেই তোমরা সমস্ত পাবে। ওদের কাছে তোমাদের বহু বহু টাকা পাওনা—তাই কেবল কড়ায়-গণ্ডায় আদায় করে নিতে হবে।

 মেয়ে-পুরুষে এই লইয়া গণ্ডগোল করিতে লাগিল। ভারতী কহিল, সন্ধ্যা হয়, এখনো আর এক জায়গায় যেতে হবে। আমরা তবে এখন আসি, কিন্তু কালকের কথা যেন কিছুতেই না ভুল হয়। এই বলিয়া সে উঠিয়া দাঁড়াইল।

 এই কালাচাঁদের আড্ডার সমস্ত ব্যাপারই অপূর্ব্বর অত্যন্ত বিশ্রী লাগিয়াছিল, কিন্তু শেষের দিকে যে-সব আলোচনা হইল তাহাতে তাহার বিরক্তির অবধি রহিল না। বাহিরে আসিয়া ভয়ানক রাগ করিয়া কহিল, তুমি এসব কথা এদের বলতে গেলে কেন?

 ভারতী জিজ্ঞাসা করিল, কি সব কথা?

 অপূর্ব্ব বলিল, ওই ব্যাটা হারামজাদা মাতাল! দুলাল না কি নাম,—কি বললো শুনলে ত? ধর এ কথা যদি সাহেবের কানে যায়?

 কানে যাবে কি করে?

 আরে, এরাই বলে দেবে। এরা কি যুধিষ্ঠির নাকি? মদের ঝোঁকে কখন কি কাণ্ড করে বসবে, তখন তোমার নামেই দোষ হবে। হয়ত বলবে তুমিই শিখিয়ে দিয়েচ।

 কিন্তু সে তো মিছে কথা?

 অপূর্ব্ব অধীর হইয়া বলিল, মিছে কথা! আরে, ইংরেজ-রাজত্বে মিছে কথায় কখনো কারো জেল হয়নি নাকি? রাজত্বটাই ত মিছের ওপর দাঁড়িয়ে।

 ভারতী কহিল, আমারও না হয় জেল হবে।

 অপূর্ব্ব বলিল, তুমি বলে ফেললে, না হয় জেল হবে! না, না, এসব হবে না, এখানে আসা তোমার আর কখ্‌খনো চলবে না।

১৩৯