পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ওর নাগাল না পেলে যে আপনার সকল উদ্যম, সকল ইচ্ছা মরুভূমির মত দুদিনে শুকিয়ে উঠবে।

 কথাগুলো অপূর্ব্ব এই নতুন শুনিল না, কিন্তু রামদাসের বুকের মধ্যে হইতে যেন তাহারা সশব্দে উঠিরা আজ তাহার বুকের উপর তীক্ষ্ণ আঘাত করিল। রামদাস আরও কি বলিতে যাইতেছিল, কিন্তু অকস্মাৎ পর্দ্দা সরাইয়া সাহেব প্রবেশ করিতে দুজনেই চমকিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। সাহেব অপূর্ব্বকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলেন, আমি চললাম। তোমার টেবিলের উপরে একটা চিঠি রেখে এসেছি, কালই তার জবাব দেওয়া প্রয়োজন, এই বলিয়া তিনি তৎক্ষণাৎ বাহির হইয়া গেলেন। উভয়েই ঘড়ির দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া সবিস্ময়ে দেখিল বেলা চারিটা বাজিয়া গেছে।


১৭

 সাহেব চলিয়া গেলে আজ একটুখানি সকাল-সকাল আফিসের ছুটি দিয়া উভয়ে ফয়ার মাঠের উদ্দেশে বাহির হইয়া পড়িল। পাঁচটায় মিটিং শুরু হইবার কথা, তার আর বিলম্ব মাই। এই দিকটার গাড়ি মিলে না, সুতরাং একটু দ্রুত না গেলে সময়ে পৌঁছানো যাইবে কি না সন্দেহ। পথের মধ্যে অপূর্ব্ব কথাবার্ত্তা প্রায় কিছুই বলিল না। তাহার জীবনের আজ একটা বিশেষ দিন। আশঙ্কা ও আনন্দের উত্তেজনার তাহার মনের মধ্যে ঝড় বহিতেছিল। কারিকর ও কুলি-মজুরদের সম্বন্ধে কতক একখানা পুস্তক হইতে এবং কতক রামদাসের নিকট সে যোগাড় করিয়া লইয়াছিল, সেই সমস্ত মনে মনে সাজাইয়া গুছাইয়া অপূর্ব্ব নিঃশষে মহড়া দিতে দিতে চলিতে লাগিল। ১৮৬৩ সালে বোম্বাইয়ের কোন্‌খানে সর্ব্বপ্রথমে তুলার কারখানা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল, তারপরে সেইগুলা বাড়িয়া বাড়িয়া আাজ তাহাদের সংখ্যা কত দাঁড়াইয়াছে, তখন কুলি-মজুরদের কিরূপ শোচনীয় অবস্থা ছিল, কিরূপ দিন-রাত্রি মেহন্নত করিতে হইত এবং এই লইয়া কবে বিলাতের তুলার কলের মালিকদের সহিত ভারতবর্ষীয় মালিকদের প্রথম বিবাদের সূত্রপাত হয় এবং কারখানা আইন কোন সনের কোন তারিখে কি কি বাধা অতিক্রম করিয়া পাশ হইয়া এদেশে প্রথম প্রচলিত হয় এবং সর্ত্ত তাহাতে কি ছিল এবং কখনই বা সেই আইন পরিবর্ত্তিত হইয়া কিরূপ দাঁড়াইয়াছে, তখনকার ও এখানকার বিলাতের ও ভারতবর্ষের মজুরির হারে পার্থক্য কতখানি, ইহাদের সঙ্ঘবদ্ধ করিবার কল্পনা কবে এবং যে উদ্ভাবন করিয়াছিল, তাহার কথা কি

১৪৬