ভারতী বলিল, আপনি কি তাঁর স্ত্রীর কাছে এখন যাবেন না?
অপূর্ব্ব তাহার মুখের দিকে চাহিয়া কহিল, যেতে হবে বই কি। কিন্তু সাহেবকেই বা কাল কি জবাব দেব? তোমাকে কিন্তু বলে রাখচি ভারতী, সাহেব একটা কথা বললেই আমি চাকরি ছেড়ে দেব।
দিয়ে কি করবেন?
বাড়ি চলে যাব। এদেশে মানুষ থাকে?
ভারতী বলিল, তাঁর উদ্ধারেরও চেষ্টাও করবেন না?
অপূর্ব্ব থমকিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, চল না একজন ভাল ব্যারিস্টারের কাছে যাই ভারতী। আমার প্রায় এক হাজার টাকা আছে,—এতে হবে না? আমার ঘড়িটড়িগুলো বিক্রী করলে হয়ত আরও পাঁচ-ছ’শ টাকা হবে। চল না যাই!
ভারতী বলিল, কিন্তু তাঁর স্ত্রীর কাছে যাওয়া যে সর্ব্বাগ্রে প্রয়োজন অপূর্ব্ববাবু। আমার সঙ্গে আর যাবেন না, এইখান থেকেই একটা গাড়ি নিয়ে স্টেশনে চলে যান, তাঁর কি চাই, কি অভাব, অন্ততঃ একটা খবর দেওয়া যে বড় দরকার।
অপূর্ব্ব ঘাড় নাড়িয়া সায় দিল; কিন্তু তথাপি সঙ্গে সঙ্গেই চলিতে লাগিল; ভারতী বলিল, এটুকু আমি একাই যেতে পারব, আপনি ফিরুন।
জবাব দিতে বোধ হয় অপূর্ব্বর বাধিতেছিল, কিন্তু ক্ষণেক মাত্র। তাহার পরেই কহিল, আমি একলা যেতে পারব না।
ভারতী বলিল, বাসা থেকে তেওয়ারীকে না হয় সঙ্গে নেবেন।
না, তুমি সঙ্গে চল।
আমার যে জরুরী কাজ আছে।
তা হোক, চল।
কিন্তু কেন আমাকে এত করে জড়াচ্ছেন অপূর্ব্ববাবু?
অপূর্ব্ব চুপ করিয়া রহিল।
ভারতী তার মুখের দিকে চাহিয়া একটুখানি হাসিল, কহিল, আচ্ছা চলুন আমার সঙ্গে। নিজের কাজটুকু আগে সেরে নিই।
পথের মধ্যে ভারতী সহসা একসময়ে কহিল, যে আপনাকে চাকরি করতে বিদেশে পাঠিয়েচে সে আপনাকে চেনে না। তিনি মা হলেও, না। তেওয়ারী দেশে যাচ্চে, আমি নিজে গিয়ে উদ্যোগ করে তার সঙ্গে আপনাকেও বাড়ি পাঠিয়ে দেব।
অপূর্ব্ব মৌন হইয়া রহিল। ভারতী বলিল, কই, উত্তর দিলেন না যে বড়?
অপূর্ব্ব কহিল, উত্তর দেবার কিছু ত নেই। মা বেঁচে না থাকলে আমি সন্ন্যাসী হতুম।
১৫৪