লোক, সে জানবে হালদারের সঙ্গে জোসেফের মামলা বাধলে ইংরাজের আদালতে কি হয়! আর কুড়ি টাকার জরিমানার দুর্নাম—
কিন্তু বিনা দোষে যে রামদাস?
রামদাস কহিল, হা ঁহাঁ, বিনা দোষেই বটে। এমনি বিনা দোষেই আমি দু’বৎসর জেল খেটেছি।
জেল খেটেছ? দু’বৎসর?
হাঁ, দু’বৎসর, এবং—এই, বলিয়া সে পুনশ্চ একটু হাসিয়া অপূর্ব্বর হাতখানা তাহার পিঠের নীচে টানিয়া লইয়া কহিল, এই জামাটা যদি সরাতে পারতাম ত দেখতে পেতেন এখানে বেতের দাগে দাগে আর জায়গা নেই।
বেত খেয়েচ রামদাস?
রামদাস সহাস্যে ঘাড় নাড়িয়া বলিল, হাঁ, এবং এমনই বিনা দোষে। তবু এত নির্লজ্জ আমি যে আজও লোকের কাছে মুখ দেখাচ্ছি। আর আপনি কুড়ি টাকার আঘাত সইতে পারবেন না বাবুজি?
অপূর্ব্ব তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া স্তব্ধ হইয়া রহিল। যে ল্যাম্প পোস্ট আশ্রয় করিয়া তাহারা দাঁড়াইয়াছিল তাহাতে আলো জ্বালিতে আসিল। সন্ধ্যা হইয়াছে দেখিয়া রামদাস চকিত হইয়া কহিল, আর না, চলুন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আমি বাড়ি যাই।
অপূর্ব্ব আবেগের সহিত বলিল, এখনি চলে যাবে? অনেক কথা যে আমার জানবার রইল?
রামদাস হাসিমুখে কহিল, সব আজই জেনে নেবেন? সে হবে না। হয়ত অনেক দিন ধরে আমাকে বলতে হবে। এই অনেকদিন কথাটার উপর সে এমনি কি একটা জোর দিল যে অপূর্ব্ব সবিস্ময়ে তাহার মুখের প্রতি না চাহিয়া পারিল না। কিন্তু সেই সহাস্য প্রশান্ত মুখে কোন রহস্য প্রকাশ পাইল না। রামদাস গলির ভিতরে আর প্রবেশ করিল না, বড় রাস্তা হইতেই বিদায় লইয়া সোজা স্টেশনের দিকে চলিয়া গেল।
অপূর্ব্ব তাহার বাসার দরজায় আসিয়া রুদ্ধ দ্বারে ঘা দিতেই তেওয়ারী প্রভুর সাড়া পাইয়া দ্বার খুলিয়া দিল। সে পূর্ব্বাহ্নে আসিয়া গৃহকর্ম্মে রত হইয়াছে, মুখ তাহার যেমন গম্ভীর তেমনি বিষণ্ণ। কহিল, তখন তাড়াতাড়িতে দু’খানা নোট ফেলে গিয়েছিলেন?
অপূর্ব্ব আশ্চর্য্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, কোথায় ফেলে গিয়েছিলাম রে?
এই যে এখানে, বলিয়া সে পা দিয়া দ্বারের কাছে মেঝের উপর একটা জায়গা
৩৪