পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 না, আবার ত কাচতে হবে!

 তেওয়ারী কহিত, বাঃ, আসন কি কখনও ছোঁয়া যায় নাকি?

 ভারতী বলিত, যায় বই কি। তোমার বাবু ত ভাবেন আমি থাকার জন্যে সমস্ত বাড়িটাই ছোঁয়া গেছে। নিজের হ’লে বোধ হয় আগুন ধরিয়ে একে পুড়িয়ে শুদ্ধ করে নিতেন। ঠিক না তেওয়ারী?

 তেওয়ারী হাসিয়া কহিত, তোমার এক কথা দিদি। তুমি নিজে দেখতে পারো না বলে সবাইকে তাই ভাবো। কিন্তু আমার বাবুকে যদি একবার ভাল করে জানতে ত তুমিও বলতে এমন মানুষ সংসারে নেই।

 ভারতী বলিত, নেই তা আমিও ত বলি। নইলে যে চুরি করা আটকালে, তাকেই গেলেন চোর বলে ধরিয়ে দিতে।

 এই ব্যাপারে নিজের অপরাধ স্মরণ করিয়া তেওয়ারী মর্ম্মাহত হইয়া পড়িত। কথাটাকে চাপা দিয়া তাড়াতাড়ি কহিত, কিন্তু তুমিও ত কিছু কম করনি? সমস্ত মিথ্যে জেনেও ত বাবুর কুড়ি টাকা দণ্ড করালে, দিদি।

 ভারতী অপ্রতিভ হইয়া বলিত, তেমনি দণ্ড ত নিজেই নিলাম তেওয়ারী, তোমার বাবুকে ত আর দিতে হ’ল না।

 দিতে হ’ল না কি রকম? স্বচক্ষে দেখলাম যে দু’খানা নোট দিয়ে তবে তিনি বার হলেন।

 আমিও যে স্বচক্ষে দেখলাম তেওয়ারী, তুমি ঘরে ঢুকেই দু’খানা নোট কুড়িয়ে পেয়ে তা বাবুর হাতে দিলে।

 তেওয়ারীর হাতের খুন্তি হাতেই থাকিত,—ও! তাই বটে।

 কিন্তু ভাজাটা যে পুড়ে উঠল তেওয়ারী, ও যে আর মুখে দেওয়া চলবে না।

 তেওয়ারী কড়াটা নামাইয়া কহিত, বাবুকে কিন্তু একথা আমি বলে দেব দিদি।

 ভারতী সহাস্যে জবাব দিও, দিলেই বা। তোমার বাবুকে কি আমি ভয় করি নাকি?

 কিন্তু এত বড় আশ্চর্য্য কথাটা ছোটবাবুকে জানাইবার তেওয়ারীর আর সুযোগ মিলিল না। কবে এবং কেমন করিয়া যে মিলিবে ইহাও সে খুঁজিয়া পাইত না। একদিন আলস্যবশতঃ সে বাসি হলুদ দিয়া তরকারী রাঁধিতে গিয়া ভারতীর কাছে বকুনি খাইয়াছিল। আর একদিন স্নান না করিয়াই রাঁধিয়াছিল বলিয়া ভারতী তাহার হাতে খায় নাই। তেওয়ারী রাগ করিয়া বলিয়াছিল, তোমরা ক্রীশ্চান দিদি, তোমাদের এত বাচ-বিচার? এ যে দেখি আমাদের মা-ঠাকরুণকেও ছাড়িয়ে গেলে!

 ভারতী শুধু হাসিয়া চলিয়া গিয়াছিল, জবাব দেয় নাই। বস্তুতঃ রান্নার ব্যাপারে

৮১