পাতা:পথের পাঁচালী.djvu/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
পথের পাঁচালী
পথের পাঁচালী

–জমিজমা সামান্য যা একটু আছে, দখল করে বসে আছেবলে তোমার ভাগ নেই।–বেশ বাপু, নেই তো নেই।–গোলমালের মধ্যে কখখনো আমি যাবো না-কবগে যা দখল। উঠি মশাই–আপনাব এখানে বেশ চা খাওয়া গেল-আপনার ছেলেটি কোথায় গেল? বেশ ছেলে, খাসা ছেলে–

পুরানো চামড়ায় তালি দেওয়া ক্যাম্বিসের জুতা জোড়াটা ঝাড়িয়া লইয়া কথকঠাকুর পায়ে দিয়া দবাজার কাছে আসিল-যাইতে যাইতে বলিল-কালও লাগাবো বামনভিক্ষ্যে-দেখি কি হয়—



পথের পাঁচালী
একত্রিংশ পরিচ্ছেদ

হরিহরের বাসাটা বিশেষ ভালো নয়। নিচের তলায় স্যাৎসোঁতে ঘর, তাও মাত্ৰ দুখানি, এত অন্ধকার যে হঠাৎ বাহির হইতে আসিলে ঘরের কোনো জিনিস নজরে পড়ে না। এরকম স্থানে সর্বজয়া কখনও বাস করে নাই, তাহাদের দেশের বাড়ি পুরানো হইলেও রৌদ্রহাওয়া খেলিবার বড় বড় দরজা জানোলা ছিল, সেকালের উঁচু ভিতের কোঠা, খটু খটু করিত, শুকনা। এ বাসার স্যাৎসেঁতে মেজে ও অন্ধকারে সর্বজয়ার মাথা ধরে। অপু তো মোটেই ঘরে থাকে না, সূর্যালোকপুষ্ট নবীন তবুর ন্যায়। শুধু আলোর দিকে তার মুখটি থাকে ফিরানো, নিশ্চিন্দিপুরের মুক্ত মাঠে, নদীর আলো হাওয়ায় মানুষ হইয়া এই বদ্ধঘরের অন্ধকারে তার প্রাণ হাঁপাইয়া ওঠে, একদণ্ডও সে সেখানে তিষ্ঠিতে পারে না।

কাশী দেখিয়া সে একটু নিরাশ হইয়াছে। বড় বড় বাড়িঘর থাকিলে কি হইবে, এখানে বন নাই মোটেই।

সন্ধ্যার দিকে একদিন কথকঠাকুর হরিহরের বাসায় আসিল। একথা ওকথার পর বলিল-কই আপনার ছেলেকে দেখচি নে?

হরিহর বলিল–কোথায় বেরিয়েচে খেলা করতে, দশাশ্বমেঘ ঘাটের দিকেই বোধ হয় বেরিয়েচে–

কথকঠাকুর উড়ানির প্রান্তে কি দ্রব্য খুলিতে খুলিতে বলিল-আপনার ছেলের সঙ্গে বড় ভোব হয়ে গিয়েচে মশাই-সেদিন ঘাটে কাছে ডেকে বসিয়ে অনেকক্ষণ ওর সঙ্গে কথা কইলাম-কড়ি খেলতে ভালোবাসে তাই এই দুটো বড় বড় সমুদ্রের কড়ি সেদিন ব্রতের সিধে কারা দিইছিল, ভাবলাম ওকে দিয়ে আসি-রেখে দিন আপনি, ও এলে দেবেন–

অগ্রহায়ণ মাসের শেবে অপু বাবাকে ধরিল সে স্কুলে ভর্তি হইবে। বলিল-সবাই পড়ে ইস্কুলে বাবা, আমিও পড়বো-ওই তো গলির মোড় ছাড়িয়ে একটুখানি গিয়েই ভালো ইস্কুল–

হরিহর ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করিয়া দিল। যদিও ছাত্রবৃত্তিস্কুল তবে ইংরাজি পড়াও হয়। প্রসন্ন গুরুমশায়ের পাঠশালা ছাড়িয়া দেওয়ার পরে-সে। প্রায় চার পাঁচ বছর হইয়া গিয়াছে-এই তাহার পুনরায় অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া।

মাঘ মাসের মাঝামাঝি কথকঠাকুর এক টুকরা বালির কাগজ হাতে একদিন হরিহরের বাসায় আসিয়া হাজির। কাগজের টুকরা দেখাইয়া বলিল-দেখুন তো মশাই পড়ে, এই রকম যদি লিখি তবে হয়?