পাতা:পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কবি য়েট্‌স্‌

গেছে, সর্বত্র তাহা সাড়া দেয় না; তাহা ছাইচাপা আগুনের মতো। এই আগুন জিনিসটা ছাইয়ের চেয়ে পুরাতন অথচ তাহা নবীন; ছাইটা আধুনিক বটে কিন্তু তাহাই জরা। এইজন্য সর্বত্রই দেখিতে পাই, কাব্য আধুনিক ভাষাকে পাশ কাটাইয়া চলিতে চায়।

 সকলেই জানেন, কিছুকাল হইতে আয়র্লণ্ডে একটা স্বাদেশিকতার বেদনা জাগিয়া উঠিয়াছে। ইংলণ্ডের শাসন সকল দিক হইতেই আয়র্লণ্ডের চিত্তকে অত্যন্ত চাপ দিয়াছিল বলিয়াই এই বেদনা এক সময়ে এমন প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল। অনেক দিন হইতে এই বেদনা প্রধানত পোলিটিকাল বিদ্রোহরূপেই আপনাকে প্রকাশ করিবার চেষ্টা করিয়াছে। অবশেষে তাহার সঙ্গে সঙ্গে আর-একটা চেষ্টা দেখা দিল। আয়র্লণ্ড্ আপনার চিত্তের স্বাতন্ত্র্য উপলব্ধি করিয়া তাহাই প্রকাশ করিতে উদ্যত হইল।

 এই উপলক্ষ্যে আমাদের নিজের দেশের কথা মনে পড়ে। আমাদের দেশেও অনেকদিন হইতে পোলিটিকাল অধিকার লাভের একটা চেষ্টা শিক্ষিতমণ্ডলীর মধ্যে প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল। দেখা গিয়াছে, এই চেষ্টার যাঁহারা নেতা ছিলেন তাঁহাদের অনেকেরই দেশের ভাষাসাহিত্য-আচারব্যবহারের সহিত সংস্রব ছিল না। দেশের জনসাধারণের সঙ্গে তাঁহাদের যোগ ছিল না বলিলেই হয়। দেশের উন্নতিসাধনের জন্য তাঁহাদের যাহা কিছু কারবার সমস্তই ইংরেজি ভাষায় ও ইংরেজি গবর্মেণ্টের সঙ্গে। দেশের লোককে লইয়া যে দেশের কোনো কাজ করিতে হইবে সে দিকে তাঁহাদের দৃষ্টিমাত্রই ছিল না।

 কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে, অন্তত বাংলাদেশে, আমরা সাহিত্যের

১০৭