পাতা:পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পথের সঞ্চয়

এই বহুবিচিত্রকে এমনতরো অনিন্দনীয় সুসম্পূর্ণতায় এক করিয়া তুলিবার মধ্যে যে একটা বৃহৎ শক্তি আছে আমি তাহাই অনুভব করিয়া বিস্মিত হইয়া গেলাম। এতবড়ো বৃহৎ ক্ষেত্রে অন্তরে বাহিরে এই জাগ্রত শক্তির কোথাও কিছুমাত্র ঔদাস্য নাই, জড়ত্ব নাই। আসন বসন হইতে আরম্ভ করিয়া গীতকলার পারিপাট্য পর্যন্ত সর্বত্র তাহার অমোঘ বিধান প্রত্যেক অংশটিকে সমগ্রের সঙ্গে মিলাইয়া নিয়ন্ত্রিত করিতেছে।

 মাঝে মাঝে ছাপানো প্রোগ্রাম খুলিয়া গানের কথার সঙ্গে সুরকে মিলাইয়া দেখিতে চেষ্টা করিয়াছিলাম। কিন্তু, মিল যে দেখিতে পাইয়াছিলাম তাহা বলিতে পারি না। এতবড় একটা প্রকাণ্ড ব্যাপার গড়িয়া তুলিলে সেটা যে একটা যন্ত্রের জিনিস হইয়া উঠিবে তাহাতে সন্দেহ নাই। বাহিরের আয়তন বৃহৎ বিচিত্র ও নির্দোষ হইয়া উঠিয়াছে, কিন্তু ভাবের রসটি চাপা পড়িয়াছে। আমার মনে হইল, বৃহৎ ব্যূহবদ্ধ সৈন্যদল যেমন করিয়া চলে এই সংগীতের গতি সেইরূপ; ইহাতে শক্তি আছে, কিন্তু লীলা নাই।

 কিন্তু, তাই বলিয়া সমস্ত য়ুরোপীয় সংগীত পদার্থটাই যে এই শ্রেণীর, তাহা বলিলে সত্য বলা হইবে না। অর্থাৎ, য়ুরোপীয় সংগীতে আকারের নৈপুণ্যই প্রধান, ভাবের রস প্রধান নহে, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য হইতে পারে না। কারণ, ইহা প্রত্যক্ষ দেখা যাইতেছে, সংগীতের রসসুধায় য়ুরোপকে কিরূপ মাতাইয়া তোলে। ফুলের প্রতি মৌমাছির আগ্রহ দেখিলেই বুঝা যাইবে, ফুলে মধু আছে, সে মধু আমার গোচর না হইতেও পারে।

 য়ুরোপের সঙ্গে আমাদের দেশের সংগীতের এক জায়গায় মূলতঃ প্রভেদ আছে, সে কথা সত্য। হার্মনি বা স্বরসংগতি

১৪৬