পাতা:পথের সন্ধান - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোড়ার অভাব

করতে লাগলো। ছেলে-বুড়ো আণ্ডা-বাচ্ছা মেয়ে মন্দ সব দলে দলে পেটের জ্বালায় মরে' পচে' ভূত হয়ে গেলো।

 ঐতিহাসিকেরা বলেন যে বাংলার তিনভাগের একভাগ লোক তখন মারা পড়েছিল। কিন্তু বাঙ্গালী তখন থেকেই এমনি অহিংস আর অবলা জাতি যে তার বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না। দলে দলে মুখ বুজে মারা গেল, কিন্তু কেন যে মরছে তা কেউ চোখ চেয়ে দেখলে না! বাংলার ইতিহাসে সুধু একজনের নাম পাই ইংরেজ রাজত্বের প্রথমাবস্থায় যার মনে স্বাধীনতার কল্পনা জেগেছিল—তিনি মহারাজ নন্দকুমার। কিন্তু ইংরেজের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে তাঁকে সে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছিল।

 তারপর থেকে এই দেড়শ' বছর ধরে' লাথির উপর লাথি আর ঝাঁটার উপর ঝাঁটা আমাদের পিঠে পড়েছে। আমরা নিতান্ত অসহায়ের মত কেঁদেছি, রাগ করেছি, অভিমান করেছি, কিন্তু খাঁটি মানুষের মত দাঁড়িয়ে উঠে আত্মনির্ভরশীল হয়ে গোড়ার রোগের প্রতিকার করবার চেষ্টা কখনো করিনি। যাদের মনে সে সঙ্কল্প উঠেছে তাদের পাগল বলে' উড়িয়ে দিয়েছি, নয়ত ধর্ম্মের ভান করে' তাদের কথা ধামাচাপা দিয়েছি। আজ সমস্ত জাতটা মরবার পথে দাঁড়িয়েছে-পেটে ভাত নেই, কোমরে কাপড় নেই, শরীরে বল নেই, বোধ হয় জোর করে কাঁদবার পর্য্যন্ত সামর্থ্য নেই। আজও সুধু কথার প্যাঁচকাটাকাটি চলেছে; আজও থুতু দিয়ে ছাতু গেলবার চেষ্টায় আছি। মনকে চোখ ঠারার আর আমাদের অন্ত নেই।