পাতা:পথ ও পথের প্রান্তে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথে ও পথের প্রান্তে ৭৫ পদ্মার বালুচরের দিকে, অনাদরের কূলে—সেখানে ফুল ছিল । না, ফল ছিল না, ফসল ছিল না—কেবল একল বসে ভাববার মতো আকাশ ছিল। আর জ্যৈদা পদ্মার যে কুলে ছিলেন, সেই কুল ছিল শু্যামল—সেখানকার দূর থেকে কিছু গন্ধ আসত, কিছু গান আসত, সচল জীবনের ছবি একটু আধটু চোখে পড়ত। বুঝতে পারতুম ঐখানেই জীবনযাত্রা সত্য। কিন্তু পার হয়ে যাবার খেয়া ছিল না—তাই শূন্যতার মাঝখানে বসে কেবলি চেয়ে থাকতুম আকাশের দিকে। ছেলেবেলায় বাস্তব জগৎ থেকে দূরে ছিলুম বলেই তখন থেকে চিরদিন “আমি সুদূরের পিয়াসী” । অকারণে ঐ ছবিট। অত্যন্ত পরিস্ফুট হয়ে মনে জেগে উঠল । তার পরে ভেবে দেখলুম, সেদিন আমিই ছিলুম ছায়ার মতো, আমার সংসারে বস্তু ছিল না, ঘরে ছিল না আত্মীয়ত, বাইরে ছিল না বন্ধুত্ব । জ্যোতিদাদা ছিলেন নিবিড়ভাবে সত্য, তার সংসার ছিল । নিবিড়ভাবে তার নিজের । সেদিন মনে করা অসম্ভব ছিল এই যেটুকু দেখছি যা ঘটছে এর কিছু ব্যত্যয় হোতে পারে। পূর্ণতার চেহারা দেখা যেত কিছুতেই ভাব। যেতে পারত না । তার কোনো কালে অস্ত আছে । সেদিনকার সেই রুটিতোসসুগন্ধি সকালবেলা যে পূর্ণজীবনের রূপক ছিল সেদিন । আমার সমস্ত জীবনে তার সমতুল্য কিছুই ছিল না। কিন্তু কোথায় সেই সকাল, সেই গুন গুন গান-করা চিন্তে চাকর —আর জ্যৈদা, তার যা কিছু সমস্ত নিয়ে কোথায়। আজ । সেই শীতের সকালের অনাদৃত রবি জাহাজে চড়ে চলছে