সাধনা তাদেরই এক পাঙ্তেয়। প্রভেদ এই যে, তপস্বীরা বহুকষ্টে সংযমী হইয়া তপস্যা করেন, কিন্তু প্রেমিকের তত্তুল্য বা ততোধিক কষ্ট অনুরাগের সহিত বলিয়া তৃণবৎ উপেক্ষিত হয়। কবি বলিতেছেন;—
‘‘কণ্টক গাড়ি’, কমল সম পদতল মঞ্জীর চীয়হি ঝাঁপি’
গাগরি-বারি ঢারি, করি পিছল পথ, চলিছি অঙ্গুলী চাপি।
মাধব তুয়া অভিসারক লাগি’।
দূরতর পন্থা গমন ধনী সাধয়ে,
মন্দিরে যামিনী জাগি;
কর-যুগে নয়ন মুদি’ চলু ভামিনী,
তিমির পয়ানক আশে।
মণি কঙ্কণ পণ ফণি-মুখ-বন্ধন,
শিখই ভুজগুরুপাশ।
গুরুজন-বচন বধির সম মানই,
আন শুনই কহ আন।
পরিজন-বচনে মুগধি সম হাসই,
গোবিন্দ দাস পরমান।’’
ইহা সামান্য নায়িকার অভিসার নহে—যে, একটু ইশারা পাইলেই ইডেন-গার্ডেন বা গোল-দীঘির বেঞ্চে বসিয়া গল্প করিবার জন্য প্রতীক্ষা করিবে কিম্বা লেক-রোডে একত্র ঘুরিয়া বেড়াইবার লোভে ছুটিয়া যাইবে। এই অভিসারের জন্য তৈরী হইতে হইলে, যুগ যুগের তপশ্চরণের দরকার। আঙ্গিনায় কাঁটা পুতিয়া, কলসী কলসী জল ঢালিয়া কণ্টকাকীর্ণ পিচ্ছল পথে যাতায়াত শিখিতে হইবে, পায়ের নূপুরের কলস্বন চীর-খণ্ডে বন্ধ করিয়া সারা রাত্রি আঙ্গুল চাপিয়া হাঁটা অভ্যাস করিতে হইবে এবং আঁধার পথে যাওয়া শিখিবার জন্য চক্ষু বুজিয়া পথে চলিতে হইবে—কারণ “আমার যেতে যে হবে গো—রাই ব’লে