পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২২
পদাবলী-মাধুর্য্য

কার্য্যে রাজ-মনস্তুষ্টি ও মিথিলাবাসীদের প্রীতি সাধিত হইয়াছে; সুপ্রসিদ্ধ বৈষ্ণবশাস্ত্রবিৎ পণ্ডিত এবং সাহিত্য পরিষৎ হইতে প্রকাশিত পদকল্পতরুর সম্পাদক সতীশচন্দ্র রায় এম-এ, নগেন্দ্রবাবুর এই কার্য্যের বিস্তারিত সমালোচনা করিয়াছেন, আমি এইটুকু মাত্র বলিতে পারি যে, যখন তিনি বিদ্যাপতির পদ সংগ্রহ করেন, তখন সম্ভবতঃ তিনি জানিতেন না, বাঙালী বহু বৈষ্ণব কবি মৈথিলভাষার ছন্দে ব্রজবুলিতে পদ লিখিয়া গিয়াছেন। সুতরাং ব্রজবুলি পাইলেই তাহা মৈথিল-পদ মনে করিয়া যাহা কিছু হাতের কাছে পাইয়াচেন—তাহাই বিদ্যাপতির রচনা মনে করিয়াছিলেন। তাহার পর যখন জানিতে পারিলেন যে, বাঙালী কবিদের এক বিরাট্‌ ব্রজবুলি-সাহিত্য আছে, তখন পূর্ব্বকৃত কার্য্যের সমর্থনের জন্য ভাষাতত্ত্বের বিশ্লেষণ করিয়া তৎসঙ্কলিত পদগুলি যে মৈথিলী-ব্রজবুলী নহে—তাহাই প্রমাণ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। কিন্তু একথা নিশ্চিত নহে যে, ব্রজবুলী ও মৈথিলীর সুক্ষ্মতার তারতম্য করিতে পারেন, এরূপ বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত অল্পই আছেন। নগেন্দ্রবাবু আদৌ ভাষাবিৎ নহেন, যেক্ষেত্রে তাঁহার বর্ণপরিচয় পর্য্যন্ত হয় নাই, সেখানে তাঁহার ‍বিচার কেহ মানিয়া লইবে না। পূর্ব্বভারতীয় ভাষাগত নানা সূক্ষ্ম বিভিন্নতা বুঝিতে স্বয়ং গ্রিয়ারসন সাহেব ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছেন; অপরের কি কথা!

 শুধু এই পদটি ও রায়শেখরের পদগুলি নহে, কত বাঙালা পদ যে বিদ্যাপতির উপর আরোপ করা হইয়াছে, তাহা নির্ণয় করা সহজ নহে। “মরিব মরিব সখী নিশ্চয় মরিব, কানু হেন গুণনিধি কারে দিয়া যাব”—গানটি, যাহার অস্থি, পঞ্জর, ত্বক, মাংস সমস্তই বাঙালার মাটী ও বাতাসের উপাদানে গড়া—তাহা কেন যে বিদ্যাপতির ঘাড়ে চাপানো হইয়াছে, তাহা একটা সমস্যা। এই গানটির ভাব সুপ্রাচীন কাল