পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
১২৫

বদলাইতে হয়। পরিহাস-রসের দৃষ্টান্ত আমরা মান-মিলন উপলক্ষে দেখাইয়াছি। ইহা ছাড়া আরও কোন কোন স্থানে ইহা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সেই সেই অংশে আমরা যেন হঠাৎ স্বর্গরাজ্য হইতে বাস্তবরাজ্যে পড়িয়া যাই। যাত্রা ও কীর্ত্তনে এই পরিহাস-রসিকতা অতি স্পষ্ট হইয়া উঠিয়া শ্রোতার মনোরঞ্জন করে। কিন্তু পাঠকেরা মনে করিবেন না, এই রসের বাহ্যিক তারল্য বৈষ্ণব আদর্শকে কোন স্থানে ক্ষুণ্ণ করিয়াছে, এই রস ইতর লোকের তাড়ি নহে, শিক্ষিত সম্প্রদায়ের টেবিলের বাহ্যিক রুচিসঙ্গত ‘বিয়ার’ নহে—ইহা ঘন খর্জ্জুর রস। ইহার জন্ম মাতালের বাহবা-দেওয়া ঘন করতালির মধ্যে নহে—ইহার জন্ম অসাধারণ ‍তপস্যা ও কৃচ্ছ্রের মধ্যে—বিদীর্ণ ও কর্ত্তিত হৃদয়ের মধ্যে হইতে বাহির হয়, এই হাস্য-রস উপভোগের সময় মাঝে মাঝে চোখে জল আসে, কারণ হাসি হইলেও ইহা বড় কষ্টের হাসি।

 মান-মিলনের পূর্ব্বে হাস্যরসের দ্বিতীয় অবকাশ খণ্ডিতা। রাধিকা বুঝিয়াছেন, কৃষ্ণ সমস্ত জগতের—তাঁহার একার নহেন। তিনি তাঁহাকে শুধু রাধা নামের ছাপ দিয়া ধরিয়া রাখিবেন কিরূপে? এই সন্দেহে সারারাত্রি প্রতীক্ষায় কাটাইয়াছেন, তাঁহার বকুলমালার ফুলগুলি বাসি হইয়া গিয়াছে। বেণী শিথিল হইয়াছে, দুরন্ত সূর্য্যের আলো যেরূপ পশ্চিম গগনে মিশিয়া যায়, তাঁহার অধরপ্রান্তে বিলীন হইয়া গিয়াছে। প্রভাতে কৃষ্ণ আসিয়াছেন, বড় কষ্টের মধ্যে সখীরা তাঁহাকে পরিহাস করিতেছে:—

‘‘ভাল হৈল ওরে বঁধু আইলে সকালো,
প্রভাতে দেখিলাম মুখ দিন যাবে ভালো।’’

 বহু বৎসর পূর্ব্বে একদা শিবু কীর্ত্তনীয়া শ্রীযুক্ত গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের বাড়ীতে কীর্ত্তন গাহিয়া শ্রোতৃবৃন্দকে মুগ্ধ করিয়াছিল।