পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
১৩৫

 এখন যেমন “জয় চৈতন্য নিত্যানন্দ” বলিয়া ভিক্ষা চাওয়া হয়, পূর্ব্বে “গোরক্ষ জাগ” শিঙ্গায় বাজাইয়া নাথ-যোগীরা তেমনই ভিক্ষা চাহিতেন। প্রাতে এই ‘জাগ’ শব্দ উচ্চারণ করিয়া নিদ্রাভঙ্গ করিবার একটা রীতি প্রচলিত ছিল, পক্ষীগুলিকেও এই বুলি আবৃত্তি করিবার জন্য শিক্ষা দেওয়া হইত (“রাই জাগ রাই জাগ শুক-শারী বোলে”—চণ্ডীদাস)। জটিলা ভিক্ষা দিতে গেলে মৌনী যোগীবর মাথা নাড়িয়া বলিলেন, তিনি ভিক্ষা লইবেন না; তাহার কারণ এই, তিনি পতিব্রতার (এখানে অর্থ সধবার) হাতে ভিক্ষা লইবেন, বিধবার হাতে ভিক্ষা লইলে তাঁহার যোগীর ব্রত নাশ হইবে, তোমার বধূকে পাঠাইয়া দেও। এই কথায় জটিলা হৃষ্টা হইল (সাধুকে খুব সদাচারী মনে করিয়া)। পরপুরুষের কাছে ভিক্ষা লইয়া যাইতে হইবে শুনিয়া রাধিকা “আই” করিয়া বলিলেন, ‘ছিঃ, আমি ওর কাছে যাব না।’ জটিলা বলিল—আমি বুঝিয়াছি, যোগী জ্ঞানী ব্যক্তি, তুমি অন্য মত করিও না (দ্বিধাযুক্ত হইও না); ‘ঘর্ ঘর্ জীউ’ অর্থে ভিক্ষা দিতে যাইয়া তাঁহার জীউ (প্রাণ) স্পন্দিত হইতে লাগিল। “শুনি ধনি রাই—নটরাজ”,— রাধিকা এ-কথা শুনিয়া চোখ মিলিয়া চাহিতেই বুঝিলেন, ইনি ভেকধারী (ছদ্মবেশী) কৃষ্ণ, তখন স্বীয় আঁচলে মুখের হাসি ঢাকিলেন। “সাধি চলল নিজ কাজ”—নিজের কাজ সিদ্ধি হইয়াছে অর্থাৎ মানভঞ্জন হইয়াছে বুঝিয়া চলিয়া গেলেন।

 মাঝে মাঝে এই সকল আমোদ-প্রমোদের কথা আমদানী করিয়া লেখকেরা কৃষ্ণ-প্রেমের মধ্যে গূঢ় নাট্যরসের অবতারণা করিয়াছেন।

 ইহা ছাড়া নানা কাব্য-কথায় অলঙ্কৃত হইয়া এই সাহিত্য চিত্তাকর্ষক হইয়াছে। বিদ্যাপতির “নয়ন যে জনু খির ভৃঙ্গ আকার, মধু মাতল কিয়ে উড়ই না পার” (রাধার চক্ষু স্থির ভ্রমরের ন্যায়, যেন মধুভাণ্ডে পড়িয়া ভ্রমরটি আটকাইয়া গিয়াছে—উড়িতে পারিতেছে না)—ভাবাবিষ্ট চক্ষুর কি সুন্দর