বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
১৪৩

 সম্মুখের ঘাটে রাধা স্নান করিলে, অপর দিকের ঘাটে কৃষ্ণের স্নান করিয়া দুই হাত বাড়াইয়া রাধার স্পর্শ-করা জলের জন্য প্রতীক্ষা করা, তাঁহার ছায়ার সঙ্গে নিজের ছায়া মিলাইবার জন্য ঘোরা-ফেরা, তাঁহার অঙ্গের স্পর্শে যে-কাপড়খানি পবিত্র হইয়া আছে, সেই বস্ত্রের সঙ্গে নিজের পরিধেয়ের একটু ছোঁয়াছুয়ি হওয়ার অপূর্ব্ব সুখের জন্য এক-রজকের নিকট কাপড় দেওয়া, কোন খানে রাধার নামের একটি অক্ষর পাইলে দুর্ল্লভ সামগ্রীর ন্যায় সেটিকে গ্রহণ করা, যে-দিন রাধার অঙ্গস্পৃষ্ট হাওয়া যে-দিকে বহিয়া যায়, সে-দিন সেই বাতাসের স্পর্শ-সুখের জন্য সারাদিন সেই-দিকে থাকা, ইত্যাদি প্রচেষ্টা পূর্ব্বরাগের প্রমত্ত অবস্থাসূচক, রায়শেখর বলিতেছেন—দেখা সাক্ষাৎ নাই, কথা-বার্ত্তার সুযোগ নাই, তথাপি কত প্রকারে যে কৃষ্ণ তাঁহার মনের আগ্রহ ব্যক্ত করেন, কবি তাহার কয়েকটি মাত্র অবস্থার কথা বলিলেন।

 প্রেম এখানে শুধু কবিত্বের উৎস নহে, উহা দিনরাত্রের অপস্যা।

 কৃষ্ণের মথুরা যাওয়ার ফলে রাধা ও সখিগণ মূর্চ্ছাপর। রাধার জীবন-সংশয়—এই কথা শুনিয়া চন্দ্রাবলী রাধার কুঞ্জে আসিলেন, আজ আর হিংসা নাই, ঈর্ষা নাই, ‘সম দুখের দুখিনী’ সকলে। আজ প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিন ফুরাইয়াছে। চন্দ্রা এতদিন ঈর্ষায় রাধার মুখ দেখেন নাই, আজ রাধার রূপ দেখিয়া আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া গেলেন, কিন্তু রাধার এই রূপ বাহিরের রূপ নহে—যে রূপে তিনি কৃষ্ণকে এতটা মুগ্ধ করিয়াছিলেন যে চন্দ্রাবলীর পার্শ্বে থাকিয়াও তিনি ‘রাধা!’ বলিয়া কাঁদিয়া উঠিতেন—ইহা সেই রূপ। যেখানে যেখানে রাধা তাঁহার কৃষ্ণপ্রেমের লীলা দেখাইয়াছেন, সেই সেই খানে চন্দ্রা তাঁহার রূপ আবিষ্কার করিয়াছেন, অন্যত্র নহে—